বাংলাদেশে করোনার পরীক্ষামূলক ওষুধে ফল দেখা যাচ্ছে না

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের প্রায় ৮২ শতাংশই বাসায় আছে। তাদের হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। আবার যারা হাসপাতালে গেছে তাদের মধ্যে মাত্র ১.৯১ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্তদের কী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে আগ্রহ-কৌতূহলের কমতি নেই। অনেকেই জানতে চান, উন্নত বিশ্বে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যেসব ওষুধ প্রয়োগের কথা শোনা যায় বাংলাদেশে তা ব্যবহার করা হয় কি না।

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব অল্প ক্ষেত্রেই পরীক্ষামূলকভাবে দুটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি সবার চিকিৎসায়ই উপসর্গভিত্তিক বরাবরের সাধারণ ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাত্র ৮ শতাংশের মতো আক্রান্তকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। বাকি সবাই বাসায় সাধারণ চিকিৎসা নিচ্ছে। অন্যদিকে এ পর্যন্ত যে ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ১৩১ জন মারা গেছে হাসপাতালে আসার পর। বাকি ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে আসার আগে বাড়িতে বা পথে।

হাসপাতালে মারা যাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। এর পরই বেশি মৃত্যু হয়েছে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে। আর দেশে এই দুটি হাসপাতালই প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য নির্বাচিত বিশেষায়িত হাসপাতাল।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত জটিল রোগীদের এ দুটি হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে জটিল কভিড-১৯ রোগীদের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে আলোচিত কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘শুরু থেকেই বলছি যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সবাইকে হাসপাতালে আসতে হবে না বা হয় না। অনেকের কোনো ওষুধ খাওয়ারও প্রয়োজন হয় না। উপসর্গ অনুযায়ী গরম পানি বা আদা চা ধরনের হালকা কিছু থেরাপিতেই তারা ভালো হয়ে যায়। অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন। মৃদু উপসর্গ থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বর ও সর্দি-কাশির সাধারণ প্রচলিত ওষুধ ব্যবহার করলেই হয়। তিনি আরো বলেন, শুধু অধিকতর ও জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে আলোচিত কিছু ওষুধ পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে দেখা যায়। তবে এসব ওষুধ ব্যবহারে সাফল্য ও ব্যর্থতা খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে।

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘যাদের একেবারেই বাঁচানো অসম্ভব বলে আমাদের কাছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মনে হয়েছে, তাদেরকে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও এজিথ্রোমাইসিন দিয়েছি। এ ছাড়া কিছুটা আশঙ্কাজনক অবস্থার রোগীদেরও ওষুধ দেওয়া হয়। কাউকে কাউকে রেভিপিরাভিরও দেওয়া হয়েছে। এর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা সাফল্য দেখেছি। ওই সব রোগীর অন্যান্য রোগের উপসর্গও ছিল। তাই আমরা এখনো এর সাফল্য সম্পর্কে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।’

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান বলেন, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় পুরনো কিছু ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তি রয়েছে। এর পরও দেশে এ পর্যন্ত ছয়-সাতটি জেনেরিকের ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা প্রয়োজন মনে করলে ওষুধগুলো রোগীর ওপর প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। তবে তাতে সাফল্য আসবেই তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা  বলেন, ‘আমরা পরীক্ষামূলকভাবে কিছু রোগীর ওপর আলোচিত একাধিক ওষুধ প্রয়োগ করেছি। কিছু ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে, কিছু ক্ষেত্রে আসেনি। আমরা এখনই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘জাপানের এভিগান ইতিমধ্যে আমাদের দেশে কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। জাপান থেকে আমাদেরকে এই ওষুধ দেওয়া হয়েছে। দেশের কয়েকটি কম্পানিও তা উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে রেমডেসিভির নিয়ে আমরা আগে থেকেই অন্যান্য দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আমেরিকান এফটিএ এটির অনুমোদন দেওয়ায় আমরাও ভরসা পেয়েছি।’

দেশে রেমডেসিভির উৎপাদন শুরু : এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে এরই মধ্যে রেমডেসিভির জেনেরিকের ওষুধ উৎপাদনের জন্য দেশীয় ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনকাজ শুরু করেছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন  বলেন, ‘রেমডেসিভির উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়া কম্পানিগুলোর মধ্যে একটির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে তাদের ওষুধ বাজারে চলে আসতে পারে। আগে থেকে কাঁচামাল সংগ্রহে থাকায় তাদের সুবিধা হয়েছে। আরেকটি কম্পানিও প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাদেরও কাঁচামাল আনা হয়েছে। বাকি কম্পানিগুলো কাঁচামাল সংগ্রহের চেষ্টা করছে।