করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কোথাও সরকারের অংশগ্রহণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকার কোথায়? সরকার এখন রাস্তাতেও নেই। অর্থাৎ গোড়ায়-আগায়, মনে-গোপনে, কার্যালয়ে নেই। সরকার এক জায়গায় আছে, শুধু টেলিভিশনে। আর কিন্তু তারা কোথাও নেই ।
সংকট মোকাবেলায় বিরোধী দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ এবং স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠন করার দাবিতে কর্ণপাত না করায় সরকারের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম সর্বদলীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে। সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি তারা। ব্যুরোক্রেট-বিশেষজ্ঞ ছাড়া স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ— যেমন, ড. রেহমান সুবহান, মির্জা আজিজুল ইসলাম, হোসেন জিল্লুর রহমান, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. সালেহউদ্দিন, রাশেদ তিতুমীরকে নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠন করার দাবি করেছিলাম। সেটাও করা হয়নি। এনাদেরকে ডেকে তো পরামর্শ নিতে পারতেন। কিন্তু সেটা তারা করেননি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে একটা টেকনিক্যাল কমিটি করেছে। সেখানে অনেক বরণ্যে চিকিৎসক বাদ পড়েছে এবং এই ধরনের ভাইরাল ডিজিজের সঙ্গে যারা লেখাপড়া করেছেন তাদেরকে সম্পৃক্তই করা হয়নি। সেখানে দলীয়কলণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের দূরদৃষ্টি একেবারেই নেই। রাজনীতি বা রাষ্ট্র পরিচালনার প্রজ্ঞার অভাব। চরম উদাসীনতা এবং দাম্ভিকতা-অহংকার ছাড়া আর কিছুই তাদের কাছে নেই। যার ফলে যতই তারা বলুক জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটা জনগণ মেনে নিতে পারছে না।’
শপিংমল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সরকার রমজান ও ঈদের কথা বলে প্রথমে তাৎক্ষণিককভাবে এবং পরবর্তী সময় সিদ্ধান্ত বদলিয়ে ১০ মে থেকে দোকান-পাট খুলে দিয়েছে। এটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয় যে, তারা কাকে সুযোগ করে দিচ্ছেন?’
‘শপিং মল খুলে দিচ্ছেন খুব ভালো কথা। ঈদে যারা কাজ করে, কাপড় তৈরি করে, কেনা–বেঁচা করে ছোট-বড় ব্যবসায়ী তাদের জন্য দরকার আছে। সেটা কি মানুষের জীবনের বিনিময়ে। একটা মাস কি সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যেত না, একটা মাস নিয়ন্ত্রণ করে সুযোগ সৃষ্টি করা যেত না? আসলে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যর্থতার কারণে দেশকে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘লকডাউন তুলে নেওয়ায় দেশটা ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। সরকার এটা কেনো করছে? আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, তাদের অজ্ঞতা, উদাসীনতা এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না থাকার কারণে তারা এটা করছে। যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের নির্বাচিত সরকার থাকতো, তাহলে এটা করা সম্ভব হতো না।’
ফখরুল বলেন, ‘মানুষের জীবন-জীবিকা দুইটাই যেমন রাখতে হবে ঠিক, সংক্রমণ যেহেতু এখনো উধর্বমুখী, সেহেতু আরও কিছুদিন ধরে অবরুদ্ধ সমাজিক দূরত্ব নীতিমালা কঠোরভাবে পালন করা উচিত ছিলো। কারখানাগুলো এমনভাবে খোলা যেতে পারতো যে, ধীরে ধীরে কারখানায় সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই কারখানাগুলো খোলা যেত। সেটা করা হয়নি। এতো রেক রেসলি, বলা যেতে পারে কোনো রকমের দূরদর্শিতার প্রমাণ সরকার দেখাতে পারেনি। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অদূরদর্শিতা, সমন্বয়হীনতা এবং চরম উদাসীনতা প্রমাণ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। অন্যান্য দেশ কীভাবে কাজ করছে, তারা কিভাবে সফল হয়েছে, তা সরকারের দেখা উচিত। কিভাবে ভিয়েতনাম পারলো, কিভাবে গ্রীসের মতো দেশ পারলো। আসলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যেসব বিধি দিয়েছিলো সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করেই তারা সফল হয়েছে।’
‘সরকারকে বলব, এই ধরনের দাম্ভিকতা রেখে, এই ধরনের অহংকার থেকে বেরিয়ে এসে জনগনের পাশে এসে দাঁড়াতে। সুরক্ষিত অট্টালিকায় থেকে মানুষের দুর্ভোগ, মানুষের কষ্ট-বেদনা সেটা বোঝা যায় না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।