সারা দেশে চলমান করোনা ভাইরাস মহামারি, করোনার টেস্ট জালিয়াতি ও প্রলয়ংকরী বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতা ঢাকার জন্য সরকার নানারকম ইস্যু তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘দিনকে দিন বন্যা পরিস্থিতি প্রলয়ংকরী রূপ ধারণ করছে। অস্বাভাবিকভাবে তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী এই বন্যার কবলে প্রায় ২০-২৫ টি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, তিস্তা, আত্রাই, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা ও কুশিয়ারাসহ দেশের অধিকাংশ নদীর উপচে পড়া বন্যার পানিতে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, মৎস্য খামার ভেসে যাচ্ছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কিন্ত শুধুমাত্র ‘লিপ সার্ভিস ছাড়া’ সরকার এখন পর্যন্ত কোনও উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। করোনা মহামারির ব্যর্থতা, করোনার টেস্ট জালিয়াতি ও ভয়াবহ বন্যার দুর্যোগ ঢাকার জন্য নানা ইস্যু তৈরি করে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে সরকার।’
শনিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘২৩ দিন ধরে অতিবাহিত হওয়া বন্যা পরিস্থিতির এখনও কোনও উন্নতি নেই। বরং দিনকে দিন বন্যা প্রলয়ংকরী রূপ ধারণ করছে। বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই বন্যা নাকি আরও তিন সপ্তাহ স্থায়ী হবে, যদি তাই হয় তাহলে বাংলাদেশের ব্যাপক এলাকা পানিতে ডুবে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করবে।’
তিনি বলেন, ‘কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ ব্যাপক এলাকায় নদী ভাঙন বিপজ্জনক রূপ ধারণ করেছে। নদী ভাঙনের ফলে বন্যা দুর্গত এলাকায় পাট, ধান, সবজিসহ ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু নদীর পেটে চলে গেছে। নাজেহাল অবস্থায় পড়েছে বাঁধ ভাঙা এলাকার লোকজন। বন্যার পানিতে চাষবাস ও বসবাসের যোগ্য নদীর চরগুলো তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ হাহাকার করছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ৪টি চর যমুনার বুকে তলিয়ে গেছে। এভাবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার করাল গ্রাসে কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধার বেশ কিছু গ্রাম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে দ্বিতীয় দফা বন্যা চলছে। আরও এক দফা বন্যার পূর্বাভাসে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে হাওরবাসী।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ফসল আবাদ করে যে মানুষগুলি স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতো তারা এখন বন্যা-আশ্রয় কেন্দ্রে দু’মুঠো খাবারের জন্য হাহাকার করছে। নদীভাঙন রোধে সরকারের দ্রুত কোনও তৎপরতা নেই। ভাঙনের শিকার অসহায় মানুষগুলোকে সহায়তা করতে সরকারি যন্ত্রের শৈথিল্য পরিস্থিতিকে চরম অবনতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এমনকি গবাদি পশু ও শিশু খাদ্যের সংকটও চরম মাত্রায় বিরাজমান।’
তিনি বলেন, ‘বন্যা উপদ্রুত মানুষগুলোর জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা না থাকায় তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। করোনার মহামারি মোকাবিলায় অনাচার, অব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার ন্যায় বন্যা মোকাবিলায় সরকার উদাসীন ও নির্লিপ্ত। করোনার আঘাতে অসুস্থ মানুষের প্রতি সরকার যেমন কোন দায় বোধ করেনি ঠিক তেমনি বন্যাকবলিত লাখ লাখ অসহায় মানুষের প্রতিও সরকার ভ্রুক্ষেপহীন। কোরাবানি ঈদের প্রাক্কালে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও মানুষের পাশে নেই সরকার। এমনিতে করোনার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মানুষ, তার ওপর বন্যার মহাদুর্যোগে মানুষ বির্পযস্ত। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা না নেয়ায় মানুষের ঈদের আনন্দ মাটি হতে বসেছে।’
তিনি বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ সমাজের বিত্তবানদের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আবারও জোর আহ্বান জানান।