বিএনপির রাজনীতিতে তরুণদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এজন্য একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ দেয়া হবে। এদের অধিকাংশই কেন্দ্রীয় নেতাদের ছেলেমেয়ে। এছাড়া আছেন ছাত্রদল, যুবদলসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক নেতারা। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অগ্রভাগে থাকেন তরুণরা।
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও একাধিকবার দলীয় অনুষ্ঠানে তরুণদের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন। তাদের নিয়ে আশার কথাও বলেছেন। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এই পরিকল্পনা। জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তরুণরা যেভাবে উৎসাহ নিয়ে বিএনপির দিকে ঝুঁকছে, তারা তো নেতৃত্বে আসবেই। যেহেতু এখন থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে দলের সব কমিটি হবে, নেতৃত্বে তারাই উঠে আসবে। আমরা ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও দু’জন তরুণ মেয়র প্রার্থী দিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ‘কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সবকিছুর অগ্রভাগে আমাদের তরুণরা। এর জন্য আমাদের চার্টারও থাকবে। চার্টারে তারা কমিটিতে আসলে দল ও সমাজের জন্য কি করবে সবকিছু থাকবে।’
বিএনপি সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচন থেকেই তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে আসছে দলটি। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫ জনের মতো তরুণ নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এর মধ্যে ১৭ জন এমপির পাশাপাশি কয়েকজন মন্ত্রীও হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও এ ধারা অব্যাহত ছিল। দলের চরম দুর্দিনেও ওই নির্বাচনে শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবুল খায়ের ভূঁইয়ার মতো তরুণ নেতা এমপি নির্বাচিত হন। অবশ্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৪০ তরুণ নেতা মনোনয়ন পান। দলের ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতেও ঠাঁই পান একঝাঁক তরুণ।
সূত্র আরও জানায়, বিএনপির রাজনীতিতে যেসব তরুণকে আনা হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সন্তানরা, যারা উচ্চশিক্ষিত। দলে ইতোমধ্যে তাদের বেশ কয়েকজন সক্রিয়ও আছেন। বাকিদেরও সক্রিয় করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ব্রিগেডিয়ার জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহের ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, মির্জা আব্বাসের ছেলে মির্জা আযান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ছেলে আবেদ মাহমুদ, প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে অ্যাডভোকেট খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু ও মেয়ে ডা. দেলোয়ারা বেগম পান্না, স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত এম সামছুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মাইনুল ইসলাম শান্ত, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান, প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের ছেলে ইরফান ইবনে আমান, জয়নুল আবেদিন ফারুকের মেয়ে তামান্না ফারুক থীমা, শ্রমিক নেতা প্রয়াত জাফরুল হাসানের মেয়ে নাসরিন হাসান তিমা, শেরপুর জেলা বিএনপির নেতা হযরত আলীর মেয়ে সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা, প্রয়াত হারুনার রশীদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রীতা, সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমান, প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ হামিদ সিদ্দিকী, সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত এএম বদরুজ্জামান খান খসরুর ছেলে মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক সংসদ সদস্য এসএ খালেকের ছেলে এসএ সিদ্দিক সাজু, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রবিন, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আনোয়ারের ছেলে কাজী নাজমুল হোসেন তাপস, প্রয়াত শাজাহান সিরাজের মেয়ে ব্যারিস্টার ফারোয়ার সিরাজ শুক্লা, চট্টগ্রামের মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা, সাবেক সংসদ সদস্য আমানউল্লাহ চৌধুরীর মেয়ে ফারহানা চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ছেলে লাভিদ ইবনে জামান ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা। এদের মধ্যে অনেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নও পান এবং দু’জন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। আবার কয়েকজন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতেও রয়েছেন। এছাড়া ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক নেতা, যারা সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় ছিলেন তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এমনকি এসব সংগঠনের যারা বিদেশে থেকেও দলকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন তাদের পদ দেয়া হবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় এমন কোনো নেতা নেই যাদের বিরুদ্ধে অন্তত অর্ধশত মামলা নেই। আবার অনেকের বয়সও হয়েছে, সেভাবে রাজনীতি করতে পারছেন না। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কেন্দ্রীয় নেতাদের ছেলেমেয়েদের রাজনীতিতে আনা হচ্ছে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক নেতাদেরও কেন্দ্রসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে পদ দেয়া হবে। তাদের নামের তালিকা নিয়ে কাজ চলছে। তারা বলেন, যাদের রাজনীতিতে আনা হচ্ছে তারা উচ্চশিক্ষিত ও স্মার্ট। অনেকে ইতোমধ্যে তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দলের হাইকমান্ডসহ নীতিনির্ধারকদের মন জয় করেছেন।