কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দৃঢ় সংকল্পকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির লক্ষ্যে সারা দেশে প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। বেকারমুক্ত শিল্পনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইকোনমিক জোনে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে অন্তত কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দেশ পুরোপুরি বেকারমুক্ত হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)।
এসব ইকোনমিক জোনের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই, সীতাকুন্ড এবং ফেনী জেলার সোনাগাজীতে অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ অন্যতম।
এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটির আয়তন প্রায় ৩০ হাজার একর। যার অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে মীরসরাই। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ এলাকায় মাটি ভরাট ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন দেশি/বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড/চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) -৩ কর্তৃক নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড/চট্টগ্রাম পবিস-৩ একটি ২০ এমভিএ উপকেন্দ্র (বেজা-১) নির্মাণ করে বিদ্যুতায়ন করেছে। বর্তমানে আরও দুটি উপকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর উন্নয়নে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রতি ডলার সমান ৮৫ (বর্তমানে ৮৪.৮৭) টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ‘প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল এন্টারপ্রেনিয়ারশিপ (প্রাইড) ফর বেজা প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ ঋণ দেবে সংস্থাটি। প্রকল্পের আওতায় সরকারের তরফ থেকেও ৩৮৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ফলে প্রকল্পের আওতায় মোট ৪ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা খরচ করা হবে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার জন্য ঋণচুক্তি করতে প্রস্তুত বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের বোর্ড এরই মধ্যে ঋণ অনুমোদন করেছে। এমনকি বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের মধ্যে ঋণের বিষয়ে আলোচনাও হয়ে গেছে। এখন বাকি শুধু ঋণ চুক্তি। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন হলেই ঋণচুক্তি অনুষ্ঠিত হবে। চার বছরের রেয়াতকালসহ ৩৪ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর সুদের হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ মোট ২ শতাংশ সুদ রয়েছে এ ঋণে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) সাহাবুদ্দীন পাটোয়ারি বলেন, সরকার দেশে বেশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চায়। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার একর জমি জুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের
সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। এটি তৈরিতে বিশ্বব্যাংক ২০১৪ সাল থেকে বেজাকে সহায়তা দিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে ৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়ে গেছে। প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পেলেই সংস্থাটির সঙ্গে ঋণচুক্তি অনুষ্ঠিত হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিল্পায়ন করে দ্রুত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। ২০১৫ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০ অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ চলছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রাইড ফর বেজা প্রজেক্ট নিয়ে পিইসি সভা হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) কিছু সংশোধন করতে হবে। এটি হয়ে গেলেই পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করবে। অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বেজা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’কে অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। এছাড়া পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও সর্বোপরি মূল্যবান বৈদেশিক মু্দ্রা উপার্জনের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। এর মাধ্যমে দেশ থেকে দারিদ্র বিমোচন করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের আওতায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের অভ্যন্তরে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফোরলেন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নিরাপত্তা বেষ্টনী, প্রশাসনিক ভবন, শিল্পনগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় ৩১ কিলোমিটার স্ট্রম ওয়াটার নেটওয়ার্ক, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট, বায়োগ্যাস প্লান্ট, ওয়েস্ট সর্টিং অ্যান্ড ম্যাটারিয়াল রিকভারি, রুফটপ অ্যান্ড ফ্লোটিং সোলারের কাজ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ৪০ কিলোমিটার ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক, ২৮ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন কানেকশন, ২৫ কিলোমিটার আউটার ইউটিলিটি কানেকশনের কাজ করা হবে। বায়োগ্যাস প্লান্ট, ল্যান্ডফিল, মাটি ও পরিবেশর ব্যবস্থাপনাসহ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও থাকছে এর আওতায়। এসব কাজের মাধ্যমে একটি গ্রিন ইকোনমিক জোন হিসেবে গড়ে তুলে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।