গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ১৯৭২ সালের ১১ই নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এদেশের যুব আন্দোলনের পথিকৃৎ শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ অর্থাৎ, সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সকল ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় চার মূলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র দূরীকরণ,দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমুহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্য থেকে স্বাধীনতা ও প্রগতিকামী যুবক ও যুব মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন গড়ে তোলাই যুবলীগের উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগের নেতা কর্মীরা দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করে।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাতটি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটির সর্বশেষ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। ১৯৭৪ সালের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। ওই সময় যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪০ বছরের একটি বয়স-সীমার বিধান ছিল।
তবে ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ওই বিধানটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে ৩৮ বছর বয়সী আমির হোসেন আমু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯৮৬ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা মহসীন মন্টু। ওই সময় তার বয়স ছিল ৩৭ বছর। ১৯৯৩ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
১৯৯৬ সালের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসে ৪৭ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগিনা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
২০০৩ সালের পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে ৪৯ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক।
২০০৮-১২ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। তারপর ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস। ওই কংগ্রেসে ৬৪ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ওমর ফারুক চৌধুরী।
গত বছর ক্যাসিনোকান্ড,টেন্ডার বাজি, সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের জড়িত থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যুবলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগর কমিটিতে অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় সামগ্রিকভাবে যুবলীগের ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে। যা নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। কারণ এই যুবলীগ বাংলাদেশের সকল লড়াই সংগ্রামে সামনে থেকে কাজ করেছে। রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অথচ গুটি কয়েকজন মানুষের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নানা সমালোচনার মুখে পড়ে। আর যুবলীগের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৩ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় সভায় শেখ ফজলে শামস্ পরশকে চেয়ারম্যান ও মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করে দায়িত্ব অর্পণ করেন।
যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই প্রথম প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করে শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, ‘যুবলীগের একজন চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থেকে কাজ করব। আপনারা আমার শক্তি হবেন। আমার বাবা মণি বঙ্গবন্ধুর ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এই সংগঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তার কন্যার দেশের প্রতি হৃদয়ের ভালবাসা থেকে আমি সাহস পাই। তাই আজ আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হচ্ছে আমি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে পালন করব।’
অন্যদিকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি যুবলীগের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে আত্মপ্রত্যয়ী হন।
তারপর থেকে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল যুবলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যুবলীগ কর্মীদের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের বাস্তবায়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেন।
যার ফলে বর্তমানে পরশ-নিখিলের নেতৃত্বে আরও বেশি সুসংগঠিত হয়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে যুবলীগ। এমনকি যখনই যুবলীগের কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সংগঠন বিরোধী কাজের অভিযোগ পেয়েছে ঠিক তখনি তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। এতে প্রমাণ করে অন্যায়কারীদের যুবলীগে কোন জায়গা নেই।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, মানুষ নানা সংকটে জর্জরিত ঠিক তখনি রাজপথের লড়াই সংগ্রামের সংগঠন যুবলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিলের নির্দেশে যুবলীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল নেতাকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাগরিক সচেতনতায় মাঠে নেমেছিল।
প্রথমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার,সাবান ও মাস্ক বিতরণ করে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হওয়ায় পথচারী, ভাসমান মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা প্রদান করেছেন। যুবলীগের কর্মী থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যার যার সাধ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
‘মুজিববর্ষে’র কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘গাছ লাগাই, জীবন বাঁচাই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সারা দেশে গাছ লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ করছে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। ফলজ, বনজ এবং ঔষধি-এই তিন রকম বৃক্ষরোপণে অংশ নিচ্ছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এই নির্দেশনার পর মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়সহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
করোনার সময় যখন ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না। ঠিক তখনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশের যুবলীগের নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছায় কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। কৃষকের পাকা ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। এমনকি ধান মাড়াই করে গোলায় ভরে দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, করোনায় আক্রান্তের ভয়ে যখন পরিবারের আত্মীয়-স্বজন করোনায় মৃত্যু ব্যক্তির দাফন কাজে এগিয়ে আসেনি। ঠিক তখনই যুবলীগ করোনায় মৃত ব্যক্তির জানাজা থেকে শুরু করে দাফনকাজ সম্পন্ন করেছে। করোনার সংকটকালীন অবস্থায় যুবলীগের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও উজ্জ্বল হয়েছে।
শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিদিন মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া যুবলীগ সারাদেশে অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে। আগস্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দোয়া মাহফিল, তবারক বিতরণ, কোরআন খতমসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে যুবলীগ।
জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যুবলীগের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, ‘যুবলীগ এই সংকটে দেশের বিভিন্ন জায়গায় লাশ দাফনে কাজ করেছে। যুবলীগের পক্ষ থেকে ৪২ লাখ পরিবারে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের দুই হাজার পাঁচশো হেক্টর জমির ধান কেটে দিয়েছে। মুজিববর্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। করোনায় সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছে। ‘
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্দেশ্য নিয়ে শেখ ফজলে শামস্ পরশকে চেয়ারম্যান ও মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা ইতোমধ্যে শতভাগ অর্জন করতে চলেছে যুবলীগ।
পরশ নিখিলের নেতৃত্বে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে যুবলীগ। যুবলীগ তাদের হারানো ঐতিহ্য, গৌরব ফিরে পেয়েছে। সামনে যুবলীগ হবে মানুষের। যুবলীগের প্রধান কাজ হবে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার থাকা।এছাড়া এদেশে যেন কোন স্বাধীনতা বিরোধী পরাশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে যুবলীগ সদা জাগ্রত আছে।
লেখক: সাবেক ভিপি, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ