দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ‘জয় বাংলা টেলিমেডিসিন অ্যাপ’ অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া সম্বলিত অ্যাপ ভিত্তিক টেলিমেডিসিন সেবা শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে এই প্রথম।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে অনলাইন জুমের মাধ্যমে অ্যাপটি শুভ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। ‘জয় বাংলা টেলিমেডিসিন অ্যাপটি’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির উদ্যোগে ডেভেলপ করা হয়েছে। ‘জয় বাংলা টেলিমেডিসিন অ্যাপ’এর মাধ্যমে দেশের মানুষ ভিডিও কলের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।
‘জয় বাংলা টেলিমেডিসিন অ্যাপ’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপকমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইইবি’র সম্মানী সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. রনক আহসান। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম। এছাড়া অ্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রকৌশলী আবু হাসান মাসুদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় বেশ অভিজ্ঞ হলেও করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আমাদের তেমন ছিল না কারণ নিকট অতীতে বাংলাদেশ এ ধরনের ভয়াবহ মহামারীর মুখোমুখি হয়নি। মার্স, সার্স ও ইবোলার মতো মহামারীর আঁচ বাংলাদেশে তেমন লাগেনি। পুরা বিশ্বের জন্যই এটি নতুন অভিজ্ঞতা। সমৃদ্ধ দেশগুলোতেও করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমসিম খেয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব টালমাটাল। বিপর্যস্ত অর্থনীতি থেকে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। চিকিৎসকরাও নিজে এবং রোগীর কথা বিবেচনা করে এই মহামারী থেকে বাঁচতে চেম্বারে রোগী দেখা অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় সময়ের প্রয়োজনে চিকিৎসা সেবায় নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছে; সেটা হলো টেলিমেডিসিন সেবা। শহর থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সারা দেশে এমনকি গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা পৌছে দেবার যে প্রক্রিয়া এটিই টেলিমেডিসিন নামে পরিচিত। করোনাই মূলত এই পথ দেখিয়েছে। দেশে টেলিমেডিসিন সেবায় কার্যত বিপ্লব ঘটে গেছে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা অন্যথায় এই সেবা প্রদান করা সম্ভব হতো না। এই সব কিছু সম্ভব হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জয় বাংলা টেলিমেডিসিন অ্যাপ বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে একটি নতুন অধ্যায়। জয় বাংলা টেলিমেডিসিন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রোগী ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করবে। এই অ্যাপে রোগীদের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে ফলে এই তথ্য পরবর্তীতে রোগ নিয়ন্ত্রনে গবেষনার কাজে ব্যাবহার করা যাবে।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ঢাকা মানে বাংলাদেশ নয়, ঢাকার বাইরের বাংলাদেশই হলো আসল বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম, মফস্বল শহর বা পল্লী অঞ্চলের একজন দরিদ্র অসহায় রোগী যার ঢাকা শহরে এসে পয়সা খরচ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর সামর্থ নেই অথবা কোন জটিল রোগী যাকে অনেক দূর থেকে চিকিৎসকের কাছে আনতে দেরি হয়ে যাবে- এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসার স্বার্থে জয় বাংলা টেলিমেডিসিন অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইলে ঘরে বসেই দূর-দুরান্তের রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। জনমানুষ উপকৃত হোক এ সেবার মাধ্যমে। পাশাপাশি এই অ্যাপ ব্যবহারে রোগীদের কোন কমপ্লেইন থাকলে তা জানার এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রাখা দরকার বলে মনে করি। যে সকল চিকিৎসক সার্বক্ষণিক সেবা দিবেন তাদের জানাচ্ছি আগাম ধন্যবাদ।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, চলমান রাজনীতি দুটি ধারার একটি ৭১এর চেতনার রাজনীতি অপরটি ‘৪৭ এর চেতনার। একদিকে যুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানের অগ্রযাত্রা অপর দিকে সাম্প্রদায়িক ভাবধারায় দেশকে পেছনের দিকে টেনে নেয়ার অপচেষ্টা। একটি ধারা উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পক্ষে অপরটি মিথ্যাচার তার নেতিবাচকতার বৃত্তে আবর্তিত। একটি উৎস জনগন এবং জনআস্থা অপরটির উৎস বন্দুকের নল।
স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপকমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর বলেন, মহামারি করোনা ভাইরাসের শুরুতেই আমরা ‘জয় বাংলা টেলিমেডিসিন অ্যাপ’ নিয়ে কাজ শুরু করি। এই অ্যাপটি বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করবে। ‘জয় বাংলা টেলিমেডিসিন অ্যাপে’র মাধ্যমে রোগীরা চিকিৎকদের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়াও অ্যাপে ক্যাটাগরি ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তালিকা, এপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম, মেডিকেল রেকর্ড আপলোড, প্রোফাইল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও অ্যাপে একটি ইন্টারেক্টিভ সোশ্যাল মিডিয়া সংযুক্ত করা হয়েছে। অ্যাপে রোগীদের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে, ফলে এই তথ্য পরবর্তীতে রোগ নিয়ন্ত্রনে গবেষনার কাজে ব্যবহার করা যাবে। অ্যাপটি বর্তমানে এন্ড্রয়েড সংস্করণে রয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই আইওএস সংস্করণ যুক্ত করতে পারবো।