সুবধাবাদী গুটিকয়েকজন অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রবীণ ত্যাগী নেতাদের উপর টিকে আছে বলে মনে করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। অনুপ্রবেশকারীরা নয় বরং যোগ্য স্থানে যায়গা হবে ত্যাগী নেতাদের।
সম্প্রতি পলিটিক্স নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
পলিটিক্স নিউজের করা এক প্রশ্নের জবাবে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, রাজনৈতিকভাবে ময়মনসিংহ বিভাগের অবস্থান অত্যন্ত ভালো। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে অন্যান্য বিভাগের মতো এখানে কিছু সমস্যা রয়েছে। নেত্রীর নির্দেশে জেলার প্রবীণ নেতাদের সাথে বৈঠক করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্য দিয়ে সকল সমস্যার সমাধাণ হবে বলে আশাবাদী আমি।
ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল আরো বলেন, কেন্দ্র থেকে দায়ীত্বপ্রাপ্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষে এখানকার জেলা, উপজেলা, সদরের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কাউন্সিলরদের সাথে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বৈঠক করেছি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতবেক চলতি বছরের মার্চের দিকে সকল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে করোনা হানায় সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আশার আলো হচ্ছে, জেলা আওয়ামী লীগের আগস্টে শোক সভা আয়োজনের মধ্যদিয়ে সেখানকার মাঠের সংগঠনের পরিবেশ ফিরেছে আগের রুপে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে সকল ত্যাগী নেতাদের উপর ভর করে টিকে আছে তাদেরকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে পলিটিক্স নিউজকে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও আমাদের দলের প্রবীণ নেতাদের বিষয় জানেন এবং তাদের সঠিক মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু কিছু নেতার কারণে ত্যাগীরা কোন কোন ক্ষেত্রে মূল্যায়ন বঞ্চিত হন।
দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারি দিয়ে নাদেল বলেন, অন্যান্য রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা গুটি কয়েক নেতা দলে অনুপ্রবেশ করার অভিযোগ রয়েছে। এই সকল অনুপ্রবেশকারিরাই আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে। স্থানীয় ত্যাগী কর্মীদের সহায়তায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পলিটিক্স নিউজকে তিনি বলেন, রাজনীতির হাতেখড়ি পারিবারিকভাবে হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছি।
স্কুল জীবনে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশের স্মৃতিচারণ করে নাদেল বলেন, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি থাকাকালীন সময়ে হল বাচাঁও আন্দোলনের মাধ্যমে আমার ছাত্ররাজনীতির পথচলা শুরু হয়েছে। তখনকার বিএনপির শিক্ষামন্ত্রী স্কুলের ছাত্রাবাস বিক্রি করেছিলেন এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর কাছে। তা ফিরিয়ে আনতে আমরা আন্দোলন শুরু করি স্কুলে ছাত্রলীগের কর্মীদের সাথে।
সাবেক সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আবেগের জায়গা থেকেই ছাত্রলীগে যোগদান করি এবং তিনিই আমার রাজনীতির আইডল।
পলিটিক্স নিউজকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আবেগের জায়গা থেকেই ছাত্রলীগ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং ভালোবাসার দলের সাথেই রয়েছি। তবে বর্তমান সময়কার মত ৮০’র দশকের দিকে ছাত্রলীগের এত ব্যাপকতা ছিল না। তৎকালীন সময়ে’র (১৯৮৬-৮৭) দিকে ছাত্রলীগ দু’ভাগে বিভক্ত ছিলো। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং জাতীয় ছাত্রলীগ। পরবর্তী সময়ে জাতীয় ছাত্রলীগ ভেঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ব্যানারে দেশের ছাত্রদের অধিকার আদায় কাজ করে আসছে।
উল্লেখ্য, ছাত্রজীবন থেকে আদর্শিক রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়েছিল শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের। ১৯৮৬ সালে সিলেট শহর স্কুল (বর্তমান সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়) ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে রাজনীতির হাতেখড়ি। এরপর ১৯৮৭ সালে সিলেট এম. সি কলেজ ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৭ সালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
২০০৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, ২০১২ সালে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।