দেশে জামায়াত নিষিদ্ধ করা একটা রাজনৈতিক চাল বলে দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতে জামায় রয়েছে। এই দলটি যদি গণতন্ত্রের পরিপন্থি হয় তাহলে ভারত সরকার জামায়াতকে ব্যান্ড করে না কেন? আমাদের দেশের এসব কিছুই সরকারের চাল। এটা আপনাকে বুঝতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই যে তত্বাবধায়ক সরকার এই তত্বাবধায়ক সরকার কার ফর্মূলা? পার্লামেন্টে সর্বপ্রথম জামায়াতে ইসলামী ১৮ জন সংসদ সদস্য নিয়ে একটা বিল উত্থাপন করলো। আওয়ামী লীগ প্রথমদিকে তাতে সমর্থন না দিলেও জাতীয় পার্টির মওদুদ আহমেদ, কাজী জাফর ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এতে সমর্থন দেন। সেদিন জামায়াতের অধ্যাপক গোলাম আজম ও মতিউর রহমান নিজামীর সাথে আওয়ামী লীগের ৩২ নম্বরের বাড়িতে যে বৈঠক করা হয়েছে সে ছবিতো এখনও আছে। সেদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জামায়াতের চিন্তা-চেতনায় তত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলন করেছেন।’
বুধবার (১১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে “৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস” উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি নিজে রক্ষীবাহিনীর সাথে সামনাসামনি অনেক যুদ্ধ করেছি। তাদের কথাবার্তা বা আচরণে মনে হয়নি তারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী কেউ। অধিকাংশ রক্ষী বাহিনী ছিলো ভিনদেশি। কোন দেশি তা আমরা জানি না, তবে ভিনদেশি।’
তিনি বলেন, ‘আওয়াজ বা চিৎকারেও কিন্তু মানুষের পরিচয় বোঝা যায় যে, সে সিলেটের না বরিশালের। আমরা যেহেতু তৎকালীন সময়ে সম্মুখযুদ্ধ করেছি, সেকারণেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম রক্ষীবাহিনীতে ভিনদেশি লোক আছে।’
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আজকে আমাদের বিশাল সেনাবাহিনী আছে, বর্ডার গার্ড আছে। প্রতিদিন সীমান্তে গুলির শব্দ আসে একপাশ থেকে। আমাদের দিক থেকে গুলি করা হয় না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা গুলি ছুঁড়বো না। তাহলে আমরা বিদেশ থেকে এতো অস্ত্রশস্ত্র কিনি কেন? আমাদের নাগরিকদের মারা হচ্ছে, বর্ডার কিলিং হচ্ছে, কিন্তু কোনও প্রতিবাদ নেই।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘এখন আমাদের যে সীমানা আছে সেখানে তো গার্ড থাকার দরকার নেই। কয়েকজন চৌকিদার হারিকেন নিয়া দাঁড়িয়ে থাকলেই পারেন। তারা দেশের ভেতরে ঢুকে যাকে খুশি তাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে, গুলি করে হত্যা করতে পারে। তবে আজকে এতসব আধুনিক সমরাস্ত্র দিয়ে আমরা কী করি? সেনাবাহিনীর ট্রেনিংটাই হলো সীমান্তের ওপারে গুলি করা। কিন্তু আমরা পণ করেছি সেটা করবো না। সেই মানসিকতাটাই আমরা হারিয়ে ফেলেছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যা হলো, পুরো দেশে প্রতিবাদ হলো। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর প্রধান গেলেন, পুলিশ প্রধান গেলেন, আসামিরাও গ্রেফতার হলো। একটু খবর নিয়ে দেখেন আসামিরা এখন জেলখানায় আছে কিনা? কোনও খোঁজখবর নাই। হয়তো পরবর্তী হাজিরার সময় বোঝা যাবে আসামিদের আদালতে হাজির করতে পারবে কি পারবে না। তাহলে আমরা কোথায় আছি? আমরা শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে আসলাম, কিন্তু আরেক শৃঙ্খলে আবদ্ধ হলাম আজীবনের জন্য।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘বলা হয়- চার নেতার হত্যার জন্য জিয়াউর রহমান দায়ী, শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের জিয়াউর রহমান এদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারিখ বলে ৩ নভেম্বর রাতের ফ্লাইটে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে গিয়েছেন। তখনতো খালেদ মোশাররফ ছিলেন। জিয়াউর রহমানতো ২ তারিখ ভোর বেলা থেকে বন্দি ছিলেন। সুতরাং খালেদ মোশাররফের সাথে আলোচনা করে জেলখানায় হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করা হয়, এ কথা বুঝতে কি কষ্ট হয়?’
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের মহাসচিব এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক সংসদ সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মীর মোমিনুর রহমান সুজন, শফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মোফাজ্জল হোসেন হৃদয়, ওলামা দলের কেন্দ্রীয় নেতা শাহ মোহাম্মাদ মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।