জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, ১২ নভেম্বর কারা বাসে আগুন দিয়েছে, তা বের করতে হবে। সরকার বিএনপিকে দোষ দিচ্ছে আবার বিএনপি বলছে তারা দায়ী নয়। আগুন-সন্ত্রাস মেনে নেয়া যায় না। কোনো মতেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেয়া যাবে না। আগুন-সন্ত্রাস প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টির পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আস্থা ও নিরাপত্তাহীনতার মাঝে মানুষের কাছে আস্থার রাজনৈতিক শক্তি হচ্ছে জাতীয় পার্টি। দেশের মানুষ চায় জাতীয় পার্টি আরও শক্তিশালী হয়ে মানুষের কল্যাণে দায়িত্ব গ্রহণ করুক। দেশের মানুষ অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথম বা দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে টিকে থাকতে চায়। জাতীয় পার্টি মানুষের প্রত্যাশা পূরণের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে রাজনীতি করছে।
জিএম কাদের আরও বলেন, রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের প্রধান হিসেবে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অনেক সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন। ঔপনিবেশিক প্রথা ভেঙে উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তন করেছেন। ঔষধ নীতি করে বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পকে রফতানিমুখী শিল্পে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি বলেন, এখন সবাই অনুধাবন করছেন পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বাস্থ্যনীতি ও শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে এরশাদের সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করতেই তাকে স্বৈরাচার বলা হয়েছে। দেশের মানুষ এখন উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন, এরশাদই প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন।
তিনি বলেন, ’৯০ সালের পরে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু সংবিধানে ৭০ ধারা সংযোজনের মাধ্যমে ’৯০ সালের পর থেকে দেশে পরোক্ষভাবে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৭০ ধারার কারণে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় না। আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্র বা সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ। ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় পার্টি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে যাবে।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, এরশাদ ঘোষণা করেছিলেন, জল যার জলা তার। প্রান্তিক জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে পল্লীবন্ধু অসাধারণ উদ্যোগ বাস্তবায়িত করেছিলেন। এখন গ্রামাঞ্চলের ছোট্ট ছোট্ট জলাশয়ও ক্ষমতাসীনদের দখলে। আবার গ্রাম্যবাজারে মাছ বিক্রি করতেও ক্ষমতাসীনদের টোল দিতে হয়, এটা সভ্য সমাজে বেমানান। তিনি বলেন, দেশ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কিন্তু সরকার পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে না।
তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, কোনো দেশে ৮ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে না। হাটবাজার, সিনেমা হলসহ সব প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে; কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অটো পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাবলু বলেন, দেশের মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। মানুষ আর ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না, গণতন্ত্রের স্বার্থেই মানুষকে ভোটের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, এনাম জয়নাল আবেদিন, মাখন সরকার, হুমায়ুন খান, সুলতান মাহমুদ, এমএ রাজ্জাক খান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান মিরু, যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মণ্ডল মানিক, এসএম রহমান পারভেজ; কেন্দ্রীয় নেতা রিতু নূর, সোলায়মান সামি, মোতাহার হোসেন সিদ্দিকী, ফারুক শেঠ, গোলাম মোস্তফা, মনিরুজ্জামান টিটু, জিয়াউর রহমান বিপুল প্রমুখ।