বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল আলোচনা চলাকালে লালমনিরহাটে বিএসএফ এর গুলিতে নিরীহ বাংলাদেশি যুবক হত্যার দায় আওয়ামী লীগ সরকার এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফাভাবে দায়ী নয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের মন্তব্য শুধু নির্লজ্জভা ছাড়া আর কিছু না।
রবিবার (২০ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘কিছুদিন আগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কাঁটাতারের বেড়া কেটে গরু আনতে গিয়ে ইন্ডিয়ার গুলি খেয়ে মারা যায়, তার জন্য দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার নেবে না।’ যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা উল্টো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষদের হত্যা করারই ন্যায্যতা দেয়া হয়েছে। এ দুই মন্ত্রীর বক্তব্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী। সুতরাং সীমান্ত হত্যার দায় বাংলাদেশ সরকারও এড়াতে পারে না।’
রিজভী বলেন, ‘নতজানু মিডনাইট অটো পাসের সরকারের মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রী নন, তারা অন্য কোনও দেশের প্রতিনিধি। বর্তমান আওয়ামী সরকারে হরেক কিসিমের ক্রীতদাস ও মোসাহেবে পরিপূর্ণ। বাস্তবে এই সরকারের হাতে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির মৃত্যু ঘটেছে। তারা শুধুমাত্র অবৈধভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রভুদের তোষামোদীতেই ব্যস্ত। ফলে জনগণের জানমাল ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে নিজেদের ক্ষমতাকে আগলে রাখাকেই বড় কাজ বলে মনে করছে সরকার।’
সীমান্ত হত্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএসএফের নির্বিচারে বাংলাদেশি হত্যার বিরুদ্ধে সরকারিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ তো দূরের কথা, মৌখিক কড়া প্রতিবাদ জানাতেও আমরা কখনও দেখিনি। এটা কেবলমাত্র গভীর বেদনাদায়ক, লজ্জার ও নিন্দনীয়ই নয়, বরং আওয়ামী সরকারের ভ্রষ্টাচার, ক্ষমতালোলুপতারই মনোবৃত্তি। সে কারণেই সরকারের মন্ত্রীরা নিজের জনগণের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার ও প্রতিবেশী দেশের বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যা করতে প্ররোচিত করছেন। জনসমর্থনহীন সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই বিএসএফ এমন দুঃসাহস দেখাতে পারছে।’
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিশিরাতের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাহেবের মন্তব্য দেখে শুনে মনে পড়ছে মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিম রচিত ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার দুটি লাইন, ‘যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’ জানতে ইচ্ছে করছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন কি স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নাকি বাংলাদেশে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধি? বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে বিজয়ের দিনেও সীমান্তে মানুষ হত্যা করা হয়! বিজয়ের মাসে, এমনকি বিজয় দিবসে সীমান্তে মানুষ মারা যাওয়ার পরও যে মন্ত্রীর কোনও বিকার নেই, এরা আত্মা বিক্রি করেছেন বলেই সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যায় বিএসএফ’র পক্ষে নির্লজ্জ সাফাই গাইছেন।’
রিজভী বলেন, ‘২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বিএসএফ সীমান্তে গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিলো বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীর লাশ। সেই বর্বর দৃশ্য আজও দেশের মানুষকে ব্যথিত করে। প্রতিটি দেশপ্রেমিকের হৃদয়ে আজও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দেশের জনগণ আশা করেছিল, ফেলানী হত্যার বিচার হবে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কমে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, এই সরকারের গত ১২ বছরে প্রায় সাড়ে ৫ শত বাংলাদেশিকে সীমান্তে হত্যা করেছে বিএসএফ। এই করোনার মধ্যেও গত প্রায় এক বছরে প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে খুন হয়েছে ৪৫ জন বাংলাদেশি। এছাড়াও সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ড ও নদীতে প্রায়ই বাংলাদেশির রহস্যজনক লাশ পাওয়ার ঘটনা খবরে আসে।