বিনাভোটের সরকারের কাছে জনগণের প্রতি তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই বলে অভিযোগ করে বিএনপি। বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ সব অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সরকারের অদূরদর্শিতার কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অদূরদর্শিতা ও লুটপাটনীতির কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে আজ অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। যে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে; তার থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে অনতিবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, মূল্য, সংরক্ষণ এবং বিতরণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য জনগণের সামনে উপস্থাপনের জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি জানান, সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য অতিদ্রুত বিকল্প উৎস খুঁজে বের করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
বিকল্প উৎস হিসেবে ভ্যাকসিন কোন দেশ থেকে আনার কথা বলছেন¬– প্রশ্ন করা হলে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল যে, এগুলো সংরক্ষণে ৭০ ডিগ্রি এবং ২০ ডিগ্রি মাইনাস তাপমাত্রা লাগে। এসব আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য না এবং আমাদের দেশে এসব আনাও সম্ভব হবে না।’
‘এ ছাড়া অন্যান্য দেশ যেমন রাশিয়ার স্পুটনিক টাস্ক, চীন সিনো ফার্মার অনুমোদন দিয়ে তারা ইতিমধ্যে টিকা দিচ্ছে। অতত্রব তিন বা চারটি টিকাই এভেলেবল হবে; তা নয়। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে, তবে তাদের কাছে ৫০টি টিকার ব্যাপারে অ্যাপ্লাই করা আছে।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিকল্প বলতে আমরা যেসব টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত, আমাদের দেশের তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য, এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেয়া হচ্ছে; সেগুলোর সঙ্গে নেগোসিয়েশন করা হলে, আরও কম দামে আমাদের দেশ টিকা পেতে পারত। এখনও সুযোগ আছে বলে আমরা সরকারকে বিকল্প উৎস খোঁজার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
‘ভ্যাকসিন ক্রয় করতে গিয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (বেক্সিমকো) চুক্তি করায় আর্থিকভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুণ পড়বে। যদি কয়েক কোটি ভ্যাকসিন আমদানিও হয়ম, তা সাধারণ মানুষ আদৌ ভ্যাকসিন পাবে কিনা; তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’
সরকারের প্রস্তাবিত জেলা ও উপজেলা কমিটির মাধ্যমে টিকা সরবরাহ করা হলে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে এই ভ্যাকসিন যথাযথভাবে পৌঁছবে না বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন এই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাওয়া জনগণের অধিকার। এই অধিকার থেকে জনগণ যাতে বঞ্চিত না হয়; সে জন্য বিএনপি প্রথম থেকে এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে সরবরাহের দাবি জানিয়ে আসছে। জনগণ যাতে এই ভ্যাকসিন সঠিকভাবে পায়; সেটি অবশ্যই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
ভ্যাকসিন ক্রয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (বেক্সিমকো) চুক্তি করায় বাংলাদেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অভিযোগ করে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অন্যদিকে যদি সরাসরি সরকার ভ্যাকসিন ক্রয় করতো; তাহলে প্রায় অর্ধেক দামে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পেতো। এতে শত শত কোটি টাকা দেশের সাশ্রয় হতো।
‘শুধু একটি গোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে লাভবান করতেই এই ধরনের চুক্তি করা হয়েছে।’
ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রণীত গাইড লাইনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই গাইড লাইন অনুযায়ী যাদের ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে, তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। শুধু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার মাধ্যমে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পরিবর্তে অন্যদের এই ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে সরকারের প্রণীত নীতিমালায়। দেশের ৬০ বছরের অধিক বয়সী জনগোষ্ঠী, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠী, প্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী, সম্মুখসারির করোনা যোদ্ধারা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; যা কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদসম্মেলন হয়। এতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-উর রশীদ, মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।