এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স দেখেছিল কে কবে? পুরো সফরে হারার পর, ‘পঞ্চপাণ্ডব’ ছাড়া সফরের শেষ ম্যাচটি হারলো বিব্রতকর ভাবে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে নিউ জিল্যান্ড মাতল রান উৎসবে। সঙ্গে থাকল বাংলাদেশের সুযোগ হাতছাড়ার মিছিল। পরে বড় রান তাড়ায় ব্যাটিংয়ে ভোগান্তি।
অকল্যান্ডে বৃষ্টি বিঘ্নিত তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৬৫ রানে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। ওয়ানডের পর বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছে টি-টোয়েন্টিতেও।
খুনে ব্যাটিংয়ে নিউ জিল্যান্ড ১০ ওভারে তুলে ফেলে ১৪১ রান। সেখানে বাংলাদেশ খেলতে পারেনি ১০ ওভারও। তিন বল বাকি থাকতে গুটিয়ে গেছে ৭৬ রানে।
বৃষ্টির জন্য তৃতীয় টি-টোয়েন্টির দৈর্ঘ্য নেমে আসে ১০ ওভারে। ছোট হয়ে আসা ম্যাচে সফরকারীদের ব্যর্থতা সামনে এসেছে আরও বড় হয়ে। ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙার আত্মবিশ্বাস নিয়ে সফরে এসে বাংলাদেশ ফিরছে আরও ছয়টি হার সঙ্গে করে।
শেষ ম্যাচ শুরুর আগেই একটা ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ঊরুর চোটে ছিটকে যান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তার অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেন লিটন দাস। ব্যাট হাতে পুরো সফরেই সময়টা ভীষণ বাজে কেটেছে তার। শেষ ম্যাচেও দৃষ্টিকটু শটে বোল্ড হয়ে পান গোল্ডেন ডাকের স্বাদ।
অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মার্টিন গাপটিল ও ফিন অ্যালেনের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় নিউ জিল্যান্ড। ৩ ওভারের পাওয়ার প্লেতে স্বাগতিকরা তুলে ফেলে ৪৩ রান। ২২ বলে আসে পঞ্চাশ, ৪১ বলে একশ।
ছোট মাঠে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ঝড় তোলে অ্যালেন, গাপটিলরা। বোলারদের আলগা বলের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিং। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচে প্রথম ফিফটি করা অ্যালেন জীবন পান চারবার!
চতুর্থ ওভারে ফিরতে পারতেন অ্যালেন। শরিফুল ইসলামের সেই ওভারে দুটি ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। তৃতীয় বলে কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি রুবেল হোসেন। ষষ্ঠ বলে মোসাদ্দেক হোসেন ও সৌম্য সরকার ক্যাচের জন্য দৌড় দিলেও কেউই বল মুঠোয় নিতে পারেননি।
ষষ্ঠ ওভারে বাংলাদেশ ভাঙতে পারে শুরুর জুটি। মেহেদি হাসানের নিচু ফুলটস বলে সীমানায় আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন গাপটিল। ভাঙে ৩৪ বল স্থায়ী ৮৫ রানের জুটি। ১৯ বলে ৫ ছক্কা ও ১ চারে এই ওপেনার করেন ৪৪।
অ্যালেন খেলতে থাকেন শট। বাড়তে থাকে রান। অন্য দিকে অব্যাহত ছিল তাকে জীবন দেওয়াও। সপ্তম ওভারে অনেকটা দৌড়ে এসেও অ্যালেনের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি সৌম্য সরকার। ১৮ বলে ফিফটি করা স্বাগতিক ওপেনার তখন ছিলেন ৫০ রানেই।
নবম ওভারে গ্লেন ফিলিপসকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল। সেই ওভারেই তিনি পেতে পারতেন অ্যালেনের উইকেট। কিন্তু আকাশে উঠে যাওয়া ফিরতি ক্যাচের নিচেই যেতে পারেননি শরিফুল।
শেষ ওভারে তাসকিন আহমেদের বল স্কুপ করার চেষ্টায় বদলি ফিল্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের চমৎকার ক্যাচে থামেন অ্যালেন। ২৯ বলে খেলা তার ৭১ রানের ইনিংস গড়া ১০ চার ও তিন ছক্কায়। এই ইনিংসের জন্য তিনি জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে একমাত্র শরিফুল কোনো ছক্কা হজম করেননি। ২ ওভারে ২১ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। তাসকিন এক উইকেট নেন ২৪ রানে।
বড় রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই জোড়া ধাক্কায় পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। টিম সাউদিকে পরপর দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন সৌম্য (৪ বলে ১০)। শাফল করে স্কুপ করার চেষ্টায় পরের বলে বোল্ড লিটন।
ঝড় তোলার আভাস দিয়েও পারেননি মোহাম্মদ নাঈম শেখ। লেগ স্পিনার টড অ্যাস্টলের বলে ধরা পড়েন লং অনে। ২ ছক্কা ও ১ চারে ১৩ বলে করেন সর্বোচ্চ ১৯ রান। সেই ওভারেই বোল্ড হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
পরের ওভারে ফিরে আবার জোড়া শিকার ধরেন অ্যাস্টল। শট খেলে পা একটু উঠে যাওয়ায় লাইনের বাইরে চলে যান আফিফ হোসেন। যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন পা নামিয়ে নেওয়ার, কিন্তু করেননি। স্টাম্পিংয়ের সুযোগ কাজে লাগান ডেভন কনওয়ে।
মেহেদি হাসান টিকেন কেবল ২ বল। লেগ স্পিনারকে ছক্কায় উড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি।
দুই ওপেনারের বাইরে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন কেবল মোসাদ্দেক। তিনিও যেতে পারেননি বেশিদূর। ৮ বলে করেন কেবল ১৩।
সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে ১৩ রানে ৪ উইকেট নেন অ্যাস্টল। কেন উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া সাউদি ৩ উইকেট নেন ১৫ রানে।
মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহকে ছাড়া খেলতে নামা নতুন চেহারার বাংলাদেশ দেখাতে পারল না লড়াইয়ের মানসিকতা। নিয়মিত খেলোয়াড়দের অনেককে ছাড়াই বাংলাদেশকে অনায়াসে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারাল নিউ জিল্যান্ড। সঙ্গে ঘরের মাঠে আরও উজ্জ্বল করল বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড। সব সংস্করণ মিলিয়ে জিতল টানা ৩২ ম্যাচে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ১০ ওভারে ১৪১/৪ (গাপটিল ৪৪, অ্যালেন ৭১, ফিলিপস ১৪, মিচেল ১১*, চাপম্যান ০*; নাসুম ২-০-২৯-০, তাসকিন ২-০-২৪-১, শরিফুল ২-০-২১-১, রুবেল ২-০-৩৩-০, মেহেদি ২-০-৩৪-১)।
বাংলাদেশ: ৯.৩ ওভারে ৭৬ (নাঈম ১৯, সৌম্য ১০, লিটন ০, শান্ত ৮, আফিফ ৮, মোসাদ্দেক ১৩, মেহেদি ০, শরিফুল ৬, তাসকিন ৫, রুবেল ৩*, নাসুম ৩; সাউদি ২-০-১৫-৩, মিল্ন ২-০-২৪-১, ফার্গুসন ২-০-১৩-১, অ্যাস্টল ২-০-১৩-৪, ফিলিপস ১.৩-০-১১-১)।
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৬৫ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ৩-০ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফিন অ্যালেন
ম্যান অব দা সিরিজ: গ্লেন ফিলিপস