‘চলচ্চিত্রে শিল্পে সহসাই স্বর্ণযুগ ফিরে আসবে’ এ প্রত্যয় ব্যক্ত করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এদেশে যে শিল্পের যাত্রা শুরু, সেই চলচ্চিত্র যাতে দেশকে স্বপ্নের ঠিকানায় নিয়ে যেতে মানুষকে প্রত্যয়ী ও সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।’
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নবনির্বাচিত পরিষদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসকল কথা বলেন। তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মোঃ মকবুল হোসেন এসময় উপস্থিত ছিলেন। পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান সংগঠনের পক্ষে সূচনা বক্তব্য দেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘চলচ্চিত্র মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবনচিত্র যেমন পরিস্ফুটন করা যায়, একইসাথে মানুষের মনন তৈরি করার ক্ষেত্রেও চলচ্চিত্র বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। এদেশের চলচ্চিত্রকারবৃন্দ ও শিল্পী-কুশলীরা অনেক মেধাবী, বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার তারা পেয়েছেন এবং তাদের হাত দিয়ে তৈরি অনেক ছবি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পে শুধু স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনাই নয়, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যেন বিশ্ব অঙ্গণেও জায়গা করে নিতে পারে।’
ইতিমধ্যে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে ড. হাছান বলেন, বন্ধ সিনেমা হল চালু করতে কিম্বা চালু থাকলেও তার আধুনিকায়নে এবং নতুন সিনেমা হল স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছেন। এই তহবিল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে শতকরা ৫ টাকা হার সুদে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে শতকরা ৪ দশমিক ৫ টাকা হার সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ চালু করা একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহযোগিতায়ই আমাদের এই প্রচেষ্টা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এটি কাজ হয়েছে। এছাড়া প্রতি জেলায় নির্মীয়মান তথ্য ভবনের সাথে একটি করে সিনেমা হল থাকবে, যা ইতিমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে পাশ হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদানের বছরপ্রতি বরাদ্দ ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকায় উন্নীত করা, আগের ১০টি থেকে বাড়িয়ে গতবছর ১৬টি সিনেমাকে অনুদান দেয়া, অনুদানের ছবি আগে হলে মুক্তি না পাওয়া থেকে এখন কমপক্ষে ২০টি হলে মুক্তি দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে’ জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি আরো জানান, এফডিসি’র নতুন ভবন নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনে দু’টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটির প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রামেও এফডিসির একটি আউটলেট করার জন্য বিটিভি থেকে এক একর জায়গা এফডিসিকে দেয়া হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী এসময় চলচ্চিত্র নির্মাণে এফডিসি নির্ধারিত ব্যয় কমিয়ে আনা এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এফডিসিকে থোক বরাদ্দ দেয়ার জন্য চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। পরিচালক সমিতি নেতৃবৃন্দ চলচ্চিত্র বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও সমিতির প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন, সেন্সর বোর্ডে সমিতির প্রতিনিধিত্ব, যেকোনো চলচ্চিত্র সেন্সরের জন্য পরিচালক সমিতির সনদপত্র বাধ্যতামূলক করা, চলচ্চিত্রের বিভিন্ন কমিটিতে সমিতির প্রতিনিধিত্ব এবং সকল টেলিভিশনে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সময় পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র পরিচালকের নামসহ দেখানোর পাঁচটি প্রস্তাব সম্বলিতপত্র মন্ত্রীকে হস্তান্তর করেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সহ-সভাপতি ছটকু আহমেদ, মহাসচিব শাহীন সুমন, উপ-মহাসচিব কবিরুল ইসলাম রানা, আন্তর্জাতিক ও তথ্যপ্রযুক্তি সচিব নোমান রবিন, সাংস্কৃতিকা ও ক্রীড়া সচিব শাহীন কবির টুটুল, নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন রাজু, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ মণি সভায় অংশ নেন।
এসময় বিএনপি’র বাজেট প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গত ১২ বছর ধরে বাজেটের পরপরই তাদের একই ধরণের সমালোচনা ও মন্তব্য দেখে আসছি। বিএনপিকে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই যে, ১২ বছরে দেশটা কিভাবে এগিয়ে গেল? ১২ আগে আমাদের বাজেটের আকার ছিল ৮৮ হাজার কোটি টাকা এখন সেখান থেকে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, ৭ গুণের বেশি, এটি কিভাবে সম্ভবপর হলো?’ বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতার অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট তো এখনো পাশ হয়নি, অবশ্যই প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপি’র কোনো সুপরামর্শ থাকলে দিতেই পারেন। তারা মেধাবী কিন্তু বাজেট নিয়ে বক্তৃতায় মনে হচ্ছে তারা মেধাহীন হয়ে গেছেন।’