আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কোন জাতির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার লক্ষ্যমূলে সক্রিয় থাকে রাষ্ট্রদর্শন যা নতুন রাষ্ট্রের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বুনিয়াদ রচনা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় তৈরি করা হয়েছিল যা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি নির্মাণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশের মূল সংবিধানসহ তাঁর আমলে প্রণীত আইনসমূহের সাথে ঐতিহাসিকভাবে সম্পৃক্ত। বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে না থাকলেও সামাজিক শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর দর্শনের আলোকে আইন প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
আজ রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ আয়োজিত লেজিসলেটিভ ডেস্কবুকের খসড়া উপস্থাপন বিষয়ক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব ও প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় লেজিসলেটিভ ডেস্কবুকের খসড়া উপস্থাপন করেন ডেস্কবুকের খসড়া প্রস্তুতকারী টিমের টিম লিডার এ.কে. মোহাম্মদ হোসেন।
বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম স্লোগান হচ্ছে, ‘আইনের মাধ্যমে উন্নয়ন, জনগণের ক্ষমতায়ন’। সরকারের এ স্লোগানকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয় দ্রুত মানসম্পন্ন ও সময়োপযোগী আইন প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সময় প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে মানুষের চাহিদা, আচার- আচরণ, দাবি-দাওয়া সহ সকল বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির বিকাশ ঘটছে, বিনিয়োগ পরিবেশ পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন শিল্প বিপ্লব ঘটছে, কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরাধের ধরণ বদলে যাচ্ছে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্বায়ন হচ্ছে। এসবকে এড্রেস করার জন্য সরকার নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করছে, পুরাতন আইনগুলো সংশোধন করে সময় উপযোগী করছে। সময়ের চাহিদার প্রেক্ষিতেই সরকার করোনার প্যান্ডেমিক পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ সহ বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে।
মন্ত্রী বলেন, আইনের খসড়া প্রস্তুত ও ভেটিং এর কাজ সহজ বিষয় নয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ধরণের নীতি ও কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। আইনের প্রত্যেকটি শব্দের অর্থ এবং গুরুত্ব আছে। তাই আইনের বাক্যে শব্দ ব্যবহার করার ব্যাপারে পদ্ধতিগত অভিজ্ঞতা এবং অনুশীলনের প্রয়োজন। লেজিসলেটিভ ভাষা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চর্চা, বিভিন্ন লিগ্যাল সিস্টেম যেমন- কমন ল, সিভিল ল, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ইসলামিক লিগ্যাল সিস্টেম সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং টেকনিক, টুলস্, লেজিসলেটিভ ব্যাখ্যা, চুক্তি সম্পাদন পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হয়। এ ধারণা যতবেশি গভীর ও বিস্তৃত হয় আইনের গুণগত মান ও গ্রহণযোগ্যতা তত ভাল হয়। তাই উল্লিখিত নীতি, কর্মপদ্ধতি, চুক্তি সম্পাদন পদ্ধতি ইত্যাদি সুলিখিত ও সুবিন্যস্ত আকারে হাতের কাছে থাকা প্রয়োজন। থাকলে আইনের খসড়া প্রস্তুত ও ভেটিং কার্য দ্রুত ও দক্ষতার সাথে করা যায়।
আইনমন্ত্রী জানান, আইন প্রণয়ন কার্যক্রমকে আরো গতিশীল, পরিশীলিত ও সময়োপযোগী করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ‘আইনি গবেষণার মাধ্যমে তারতম্যমূলক আইন ও নীতি চিহিৃতকরণপূর্বক উহা সংস্কার বিষয়ক একটি প্রকল্প’ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি লেজিসলেটিভ ডেস্কবুক তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ ডেস্কবুক অনুসরণ করে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তাগণ সরকারের আইন, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, প্রজ্ঞাপন, চুক্তি ইত্যাদির খসড়া প্রস্তুত এবং ভেটিং কার্য দক্ষতার সঙ্গে ও স্বল্প সময়ের মধ্যে করতে সক্ষম হবেন।