প্রথমবারের মতো ইউরোর ফাইনাল খেলতে নামা ইংল্যান্ড এর আক্রমণ দেখেছে তাদের পাগলা সমর্থকেরা। মাত্র ২ মিনিটে লুক শ’র দেয়া গোল স্টেডিয়াম কিংবা টিবি পর্দায় এক অন্যরকম উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছিলো। তবে বিরতির পরে আস্তে আস্তে ইংল্যান্ড সমর্থক ও খেলোয়াড়দের মনে আতঙ্ক ধরাতে শুরু করেছে ইতালি। কৌশল ও আক্রমণের ফল এসেছে ৬৭ মিনিটে। সমতায় ফিরে আসলোও নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ম্যাচের মীমাংসা অনেক সুযোগ আসলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি ইতালির খেলোয়াড়রা।
‘কামিং হোম’ নাকি ‘রিটার্নিং রোম’ এই প্রশ্নের উত্তর মিলেনি অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও। তাইতো টাইব্রেকার নামক ভাগ্য পরীক্ষায় যেতে হয় দুই দলকে। সেই ভাগ্য পরীক্ষায় ৩-২ ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ৫৩ বছর পর শিরোপা রোমে নিয়ে গেলো মানচিনির শিষ্যরা।
খেলা প্রেমিদের কাছে রবিবার দিনটি ছিলো বিরল। একই দিনে কোপা আমেরিকা ফাইনাল, উইম্বলডন ফাইনাল এবং ইউরো কাপের ফাইনাল। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে একমাত্র টেস্টের শেষ দিনও ছিলো গতকাল অথ্যাৎ রবিবার। এক কথায় ‘সুপার সানডে’। যার শুরুটা হয়েছিলো মেসির কোপা জয়ের মধ্যদিয়ে। এই দিনেই হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে একমাত্র টেস্ট জিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বিদায় দিয়েছে বাংলাদেশ। সন্ধ্যায় উইম্বলডনের শিরোপা জিতে নোভাক জকোভিচ স্পর্শ করেছেন রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালের রেকর্ড। সেই সঙ্গে রেকর্ডের আরও অনেক পাতায় নিজের নাম লিখিয়েছেন এই সার্বিয়ান টেনিস তারকা। রাতেই ওয়েম্বলিতে লাখো দর্শককে কাদিয়ে ইউরোর শিরোপা জিতে নিয়েছে ইতালি।
এর আগে কখনো ইউরোর ফাইনাল খেলেনি ইংল্যান্ড। আরেক দল ইতালি শেষ ট্রফি জেতার স্বাদ পেয়েছিলো সেই ৫৩ বছর আগে। ইংল্যান্ড ও ইতালির ইউরোর ফাইনাল তাই নতুন কিছুর স্বাদ দেবে, এটা নিশ্চিত ছিল। তাই বলে এমন চমক!
প্রথমবারের মত ইউরোর ফাইনালে উঠে শিরোপাটি জয় করার জন্য যেন শুরু থেকেই মরিয়া ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় মিনিটে গোল আদায় করে ইতিহাসও গড়ে স্বাগতিকরা। যদিও গোল করেই রক্ষণকে জমাট বাধিয়ে ফেলে ইংলিশরা। গতিময় ফুটবল এবং পাল্টা আক্রমণের ধার কমিয়ে নিজেদের গোল রক্ষায় বেশি মনযোগ দেয় স্বাগতিকরা।
প্রথমার্ধে ধারহীন ফুটবল খেলা ইতালি ড্রেসিংরুম থেকে ফিরে ইংল্যান্ডকে প্রায় কোনঠাসা করে ফেলে। একের পর এক আক্রমণ করে তটস্থ করে ফেলে ইংলিশদেও রক্ষণভাগ। গোল শোধ দেওয়া তাদের সময়ের ব্যাপার ছিল। ইনসিনিয়ে তো দুটো সুযোগ হারান। ৫০ মিনিটে নেওয়া ফ্রি-কিকটি ক্রস বারের বাইরে দিয়ে যায়। ৭ মিনিট পর নাপোলির এই ফরোয়ার্ডের শট গোলপিকার পিকফোর্ড প্রতিহত করেন। ৬২ মিনিটে চিয়েসার শট গোলকিপার ঝাপিয়ে পড়ে রুখে দিয়ে দলকে ম্যাচে রাখেন।
৬৭ মিনিটে অবশ্য ইংল্যান্ডের সব প্রতিরোধ ভেঙে যায়। ইনসিনিয়ের কর্নারে ভেরাত্তির হেড সাইড বারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে পোস্টের সামনে থাকা লিওনার্দো বোনুচ্চি লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি। গোলকিপার পিকফোর্ড চেষ্টা করেও দলকে গোল খাওয়া থেকে রুখতে পারেননি। ৭৩ মিনিটে এমারসনের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়নি। এই অর্ধের শেষ দিকে এসে ইংল্যান্ড পাল্টা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হতে পারেনি। অধিনায়ক হ্যারি কেইন ছিলেন অনেকটাই নিজের ছায়া হয়ে। রহিম স্টার্লিং একাধিকবার বক্সে ঢুকে কিছু একটা করার চেষ্টা করেছেন। তবে তাকে হতাশ করেছেন ইতালির ডিফেন্ডাররা।
খেলার নির্ধারিত সময় ছিল ১-১ ড্র। এরপর যোগ করা হয় আরো ৩০ মিনিট। সেখানেও গোল করতে ব্যর্থ হন দুই দলের ফুটবলাররা। যার ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারেই হয় শিরোপার নিষ্পত্তি। ইংল্যান্ডের সমস্ত স্বপ্ন চূর্ণ হয় টাইব্রেকার নামক লটারিতে। যেখানে ইংলিশ ফুটবলাররা একের পর এক মিস করেছেন। অন্যদিকে ইতালিও মিস করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুমার অসাধারণ নৈপূণ্যে জয় হয় ইতালির। টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ৫৩ বছর পর আবারও ইউরোর শিরোপা উঠলো ইতালিয়ানদের হাতে।
টাইব্রেকারে ইতালির প্রথমটি গোল। শট নেন ডোমেনিকো বেরারদি। ১-০। ইংল্যান্ডের প্রথম শট নেন অধিনায়ক হ্যারি কেইন, গোল। ১-১। ইতালির দ্বিতীয় শট নেন আন্দ্রে বেলোত্তি। ঠেকিয়ে দেন জর্ডান পিকফোর্ড। ১-১। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় শট, হ্যারি মাগুইরে। ১-২। ইতালির তৃতীয় শট নেন লিওনার্দো বনুচ্চি। গোল। ২-২। ইংল্যান্ডের তৃতীয় শট নেন মার্কাস রাশফোর্ড। কিন্তু বলটি তিনি মেরে দেন পোস্টে। গোল হলো না। ২-২। ইতালির চতুর্থ শট নেন ফেডেরিকো বার্নার্ডেশি গোল। ৩-২। ইংল্যান্ডের চতুর্থ শট নেন জ্যাডন সানচো। ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষ ডোনারুমা। ৩-২।
ইতালির শেষ নন জর্জিনহো। কিন্তু তার শট ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। ৩-২। ইংল্যান্ডের শেষ শট নেন বুকাইয়ো সাকা। তার শটও ঠেকিয়ে দেন ডোনারুমা। ৩-২ ব্যবধানে জিতে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি।
১৯৬৮ সালে সর্বশেষ ইউরো জিতেছিল ইতালি। এরপর ২০০০ এবং ২০১২ সালেও ইউরোর ফাইনাল খেলেছিল আজ্জুরিরা। কিন্তু ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। এবার আর খালি হাতে ফিরতে হয়নি। টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডকে কাঁদিয়ে ৫৩ বছর পর ইউরোর ট্রফিটা রোমে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো আজ্জুরিরা।