তারা লিখেন না বরং মানুষের মনের মনিকোঠায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকেন বহু বসন্ত ধরে। এমন বহু লেখক আমাদের মাঝে আসেন আবার চুপিসারে হাওয়াই মিলিয়ে যান। তেমনি বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ। পাঠকপ্রিয় উপন্যাসের এই গুনী লেখক সবার দৃষ্টিসীমার বাহিরে পাড়ি জমিয়েছেন।
ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই বলছে, রোববার মধ্যরাতের কিছু আগে একটি বড় ধরনের ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
গত এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গুহ। সে সময় টানা এক মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল তাকে।
মৃত্যুকালে তিনি দুই কন্যা রেখে গেছেন। তার স্ত্রী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ঋতু গুহ ২০১১ সালে মারা যান।
১৯৩৬ সালের ২৯ জুন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন গুহ। তার সহধর্মিণী ছিলেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ঋতু গুহ। বুদ্ধদেব গুহ তার শৈশবের বড় একটা সময় কাটিয়েছেন বাংলাদেশের বরিশাল, রংপুর, জয়পুরহাটে।
বরিশাল জেলা স্কুলেও পড়েছেন তিনি। এর পর কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন।
তার শৈশবের নানা অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময় তার লেখালেখিতে উঠে আসে। তার লেখা উপন্যাস ও ছোটগল্পগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।
তিনি আনন্দ পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
মাধুকরী ছাড়াও তার পাঠকপ্রিয় উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘কোয়েলের কাছে’ ও ‘সবিনয় নিবেদন’।
তার দুটো রচনা ‘বাবা হওয়া’ এবং ‘স্বামী হওয়া’-র ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে পুরস্কারজয়ী বাংলা চলচ্চিত্র ‘ডিকশনারি’।
বুদ্ধদেব গুহ পেশায় ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। এ ছাড়া ধ্রুপদী সংগীত ও ছবি আঁকায় দক্ষতা ছিল তার।
বুদ্ধদেব গুহর প্রথম উপন্যাস ‘জঙ্গলমহল’। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’, ‘অববাহিকা’, ‘বাবলি’, ‘পঞ্চ প্রদীপ’, ‘কুমুদিনী’, ‘কুসুম’, ‘বাতিঘর’, ‘ভাবার সময়’, ‘নিবেদন’, ‘পরিযায়ী’, ‘চাপরাশ’, ‘রাগমালা’, ‘হাজারদুয়ারী’, ‘আয়নার সামনে’, ‘অবন্তিকা’, ‘বইমেলাতে’, ‘বাসনা কুসুম’, ‘চন্দ্রায়ন’, ‘বনবাসর’, ‘সাজঘর’।
শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও তার জনপ্রিয়তা ছিল। তার সৃষ্ট ঋজুদা বা ঋভুর মতো চরিত্র পাঠকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে।