নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া দেশে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হবে না বলে বর্তমান সরকারকে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর সেই ধরনের নির্বাচন হবে না। যে নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। আগামীতে নির্বাচন করতে হলে দেশের মানুষের শর্ত মেনে নির্বাচন হবে। তা না হলে দেশে আর কোন অনৈতিক রাতের আধারে ভোট চুরির নির্বাচন হবে না।
গত দুদিন আগে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শনিবার দুপুরে এক আলোচনাসভায় অংশ নেন মির্জা ফখরুল।
সেখানে তিনি বলেন, উনি (শেখ হাসিনা) নির্বাচনের কথা বলেছেন, তার দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কোন নির্বাচন? যে নির্বাচন শুধুমাত্র আপনাকে নির্বাচিত করবে সেই নির্বাচন, যে নির্বাচনে আমাদের জনগণ যারা ভোটার আছে তারা ভোট দিতে যেতে পারবে না, এমনকি তাদের বাড়ি-ঘর আক্রমণ করা হবে, ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদেরকে বেইজ্জতি করা হবে, নির্যাতন করা হবে সেই নির্বাচন? যে নির্বাচনের আগের রাতেই আপনারা দখল করে নিয়ে চলে যাবেন সেই নির্বাচন? যে নির্বাচন আপনাদের ক্ষমতায় যাওয়ার আরেকটা পথ সুগম করবেন সেই নির্বাচন?
‘আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই- বাংলাদেশে আর সেই ধরনের নির্বাচন হবে না। আমাদের খুব পরিষ্কার কথা, নির্বাচন একটা হবে। সেই নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, সেই নির্বাচন হতে হবে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়। আর সবার আগে গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে এবং একই সঙ্গে মুক্ত করতে হবে যারা কারাগারে আছেন। গণতন্ত্রের কর্মীনেতা, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে যাদেরকে আটক করে রাখা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। আর ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে সেই মামলাগুলোকে প্রত্যাহার করতে হবে। এর আগে কোনো নির্বাচন হবে না এ দেশে।’
নির্বাচন কমিশন গঠন সংসদ আইন প্রণয়নে আপত্তি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলতে চাই- নির্বাচন কমিশন গঠন হবে তখনই যখন একটা সত্যিকার অর্থেই একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন হতে পারে সেই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়। আইন করা হবে বলছেন। কোন আইন?
‘‘আপনারা আইন করবেন পার্লামেন্টে যেখানে আর কেউ নেই, কথা বলার সুযোগ নেই বা আপনারা একতরফা আইন পাস করে নিয়ে যাবেন আপনাদের সুবিধার জন্য। সেই আইনের মধ্য দিয়ে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে সেটাও এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।
১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান মহিলা দল প্রতিষ্ঠা করেন।
সর্বত্র দলীয়করণের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার দেশকে এমন একটা পর্যায় নিয়ে গেছে যে, দেশে এখন আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। সমস্ত রাষ্ট্র যন্ত্রকে আপনারা দলীয়করণ করেছেন, বিচার বিভাগ দলীয়করণ হয়ে গেছে, প্রশাসন দলীয়করণ হয়েছে গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আপনারা দলীয়করণ করেছেন। এমনকি আপনার সেনাবাহিনীকেও আপনারা দলীয়করণ করার চেষ্টা করছেন। আমরা কথা বলতে পারছি না, আমরা লিখতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা তারা কখনোই বিনা ভয়ে কিছু লিখতে পারেন না। কারণ তাদেরকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ফেলা হয় অথবা তাদেরকে বিভিন্ন আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এভাবে একতরফা, একদলীয় শাসনব্যবস্থা, একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করা, ফ্যাসিবাদী সরকারকে চিরস্থায়ী করা-এটা কোনোদিনই এদেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না। এটা হচ্ছে বাস্তব কথা। আমরা লড়াই করেছি, আমরা যুদ্ধ করেছি, যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছি। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল কী? একটা ছিলো রাজনৈতিক মুক্তি ও আরেকটা অর্থনৈতিক মুক্তি। সেই রাজনৈতিক মুক্তিই তো আমি পাইনি, আমি তো এখন পুরোপুরিভাবে বন্দি হয়ে আছি।’
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের জন্য মহিলা দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্রের মুক্তি-এই প্রত্যাশায় মহিলা দলকে সংগঠিত করে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই-এ কথা মনে করে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে যেভাবে আমাদেরকে হয়রানি করছে যেভাবে বসে থাকার কোনো কারণ নেই। এখন আমাদের একটাই উদ্দেশ্য- শেখ হাসিনারে মারো টান, গদি হবে খান খান। অর্থাৎ শেখ হাসিনার পতন সকল সমস্যার সমাধানের পথ খুলবে।
‘আসুন সেই একদফায় এগিয়ে যাই। দলের মহাসচিবসহ আমাদের চেষ্টা চলছে সুদৃঢ় একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং দলমত নির্বিশেষ একটাই ইস্যু- অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি হাসিনার পদত্যাগ। তার এই পদত্যাগ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে হয়তো বা মতামত আমরা দেবো। তবে আমি বলব, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে ফেরেশতা এনেও যদি নির্বাচন কমিশন করা হয় তারপরেও লাভ হবে না।
‘শয়তানে যেখানে আছর করে সেখানে ফেরেশতারাও অসহায় হয়ে যায়। সুতরাং শয়তানের আছর থেকে দেশকে মুক্তি করতে হলে এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি-এই স্লোগান নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব।’
সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেওয়াজ হালিমা আরলি, হেলেন জেরিন খান, ইয়াসমীন আরা হক, চৌধুরী নায়াব ইউসুফ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।