সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদোক পদত্যাগ করেছেন। স্থানীয় সময় রোববার সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভে হতাহতের পর রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
আবদাল্লাহ হামদোক বলেন, সুদানের গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য একটি নতুন চুক্তির প্রয়োজন ছিল, যেটি আমরা করেছিলাম।
তবে চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্ত দায়িত্ব আমি ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করছি। দেশের নেতৃত্বের জন্য অন্য কোনো পুরুষ বা নারীকে সুযোগ করে দিচ্ছি, যিনি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে সুদানকে একটি বেসামরিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার পথে বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করতে পারেন।’
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, রোববার রাজধানী খার্তুমে কয়েক হাজার মানুষ সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করেন।
এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে টিয়ার গ্যাস এবং পরে অতর্কিত গুলি চালায়। এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ এক তরুণ নিহত হন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী শহর ওমদুরমানেও বিক্ষোভে গুলি চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
এ সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরেকজনের মৃত্যু হয়। কিন্তু সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন সাধারণ মানুষ। এখনও পর্যন্ত সহিংসতায় প্রাণ গেছে অন্তত ৫৬ জনের।
গত ২৫ অক্টোবর দেশটির শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদোককে গৃহবন্দি ও বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন তিনি।
সুদানিদের বিক্ষোভ ও বৈশ্বিক চাপের মুখে গত ২২ নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদোককে স্বপদে ফিরিয়ে আনেন দেশটির সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান।
দেশটির সেনাপ্রধানের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের চুক্তিও হয়। তবে বেসামরিক সরকারকে ‘স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না’ অভিযোগ তুলে দেশটিতে এখনও সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভ করছেন সুদানিজরা।
এরই মধ্যে রোববার ২ জানুয়ারি রাতে সুদানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন আবদাল্লাহ হামদোক। ক্ষমতায় ফেরার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পদত্যাগ করলেন তিনি। পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, সুদানে তিন দশক ধরে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ছিলেন ওমর আল-বশির। ২০১৯ সালে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির ক্ষমতাচ্যুত হন।
তার পর বেসামরিক ও সামরিক নেতারা দেশটিতে গণতন্ত্র ফেরাতে ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি করেন। অক্টোবরের অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান দাবি করেছেন সুদান এখনও বেসারিক শাসনে ফিরে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০২৩ সালের জুলাইতে পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন হবে বলেও জানান তিনি। তবে বিক্ষোভকারীরা বলছেন তারা সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করেন না।