রাজধানী ঢাকার বকশীবাজারে অবস্থিত সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ক্যাম্পাসে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপন না করার দাবি জানিয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকার ছাত্রাবাসসহ এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিবর্তে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ভেতর মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপন করার পরিকল্পনা সরকারের দ্বিমুখী আচরণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা অবজ্ঞা করার শামিল।
আজ রোববার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকাকে ধ্বংসের চক্রান্তের অভিযোগে এক সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন। মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকার প্রাক্তন ছাত্র ফোরাম ব্যানারে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠনটির নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এ সময় মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র তথা সাধারণ ধর্মপ্রাণ জনতার মধ্যে একটা ভুল–বোঝাবুঝি সৃষ্টির অপকৌশল চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকার জমিতে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ভবন স্থাপনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল, মাদ্রাসার চার একর জমি দখলমুক্ত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট নিরসনকল্পে কমপক্ষে আরও দুটি আবাসিক হল নির্মাণের কাজ অবিলম্বে শুরু করাসহ পাঁচটি দাবি জানানো হয়েছে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অন্য দুটি দাবি হচ্ছে, বর্তমান ছাত্রদের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে ছাত্রাবাস অবিলম্বে খুলে দিতে হবে। মাদ্রাসার ২৫০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষাকল্পে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে ‘ঢাকা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি পড়ে শোনান সংগঠনের সদস্যসচিব মোহাম্মদ সুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা শুধু শুধু আন্দোলন করছে, মাদ্রাসা ছাত্রাবাসে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর হবে, এটা সরকারি সিদ্ধান্ত।’ মন্ত্রীর এমন বক্তব্য জানতে পেরে ছাত্ররা আন্দোলনে নামেন। একটি স্বতন্ত্র ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ভবন নির্মাণ পরিকল্পনার প্রতিবাদ করা ছাত্রদের মৌলিক দায়িত্ব।
সুরুজ্জামান জানান, ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মুখে ৫ জানুয়ারি হঠাৎ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে দেওয়ার ফলে সংকট সময়ে শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর আলাদা স্বতন্ত্র কোনো স্থানে হতে পারে। এটি কোনোভাবেই একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসের প্রাচীরের ভেতর হতে পারে না। এই সিদ্ধান্ত শুধু অমানবিক নয়, অনৈতিক এবং ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠকে অবজ্ঞা, অবহেলা ও তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার এক গভীর চক্রান্ত ও নীলনকশার অংশ।’
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য ইসমাইল ফারুক, আজিজুল হক, আহমেদ আবদুল্লাহ, শহিদুল ইসলামসহ বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।