অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন: রাষ্ট্রপতি

ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর আপসহীন মনোভাবের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলা কেটেছে গ্রামের কাদা-জল, মেঠোপথ আর প্রকৃতির খোলামেলা পরিবেশে। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মানবদরদী। কিন্তু অধিকার আদায়ে আপসহীন। ’

আজ ১৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী’ ও ‘জাতীয় শিশু দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় প্রখ্যাত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতীয় শিশু দিবসে এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অঙ্গীকার, সকল শিশুর সমান অধিকার’।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘পরোপকার আর অন্যের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সবসময় তিনি নিজেকে জড়িয়ে নিতেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে যেখানেই অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতন দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ব্রিটিশবিরোধী সভা-সমাবেশে অংশ নেন তিনি। ’

‘তিনি গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ পরিচালনা করেন। চল্লিশের দশকে এই তরুণ ছাত্রনেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সংস্পর্শে এসে সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘৪৭ এ দেশ বিভাগের কিছুদিন পরই তরুণ নেতা শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন, ব্রিটিশ পরাধীনতার কবল থেকে মুক্তি পেলেও বাঙালি নতুন করে পশ্চিমাদের শোষণের কবলে পড়েছে। শাসকগোষ্ঠী প্রথম আঘাত হানে বাঙালির মায়ের ভাষা ‘বাংলা’র ওপর। ’

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাংলা ভাষার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ বঙ্গবন্ধু সচিবালয় গেট থেকে গ্রেফতার হন। এভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম ও কারাভোগের মধ্য দিয়েই তিনি বাঙালির অধিকার আদায়ের পথে এগিয়ে চলেন। ’

‘১৯৪৮ সালে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’, ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬-দফা, ’৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে অমানসিক নির্যাতন। কিন্তু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনো শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করেননি। ’

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বাঙালির আবেগ ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন‍,‍‍ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। ’

‘একটি ভাষণ কীভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ। এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার ডাকই দেননি বরং মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কেও দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। ’

যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুর্নগঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠনে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। দেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার সব ধরনের প্রস্তুতি তিনি গ্রহণ করেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। ’

‘জলে-স্থলে-আকাশে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সঙ্গে তুলনা করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। ’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’। আজ থেকে ৫০ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। আজ সব আশঙ্কা ও নেতিবাচক ভবিষ্যৎবাণী ভুল প্রমাণ করে জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আজ আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দিকে।