আমি চাই ভোলার ব্যাপক উন্নয়ন হোক, ভোলার মানুষ ভালো থাকুক: ইঞ্জিনিয়ার নোমান

রাকিব মোরতাজা,স্টাফ রিপোর্টার

 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার। তিনি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তার জন্ম ভোলা জেলার লালমোহনে। সেখানে তিনি প্রথমিক ও মাধ্যমিক শেষ করেন। তিনি করিমগঞ্জ মাধ্যমিক স্কুল থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি পাশ করে পরবর্তীতে রাজশাহী থেকে এইচএসসি পাশ করে বুয়েটে পড়ার সুযোগ পান। এরপর বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকুরী ও ব্যবসা জীবন শুরু করেন। তার ছাত্রজীবন ও রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীক জীবন নিয়ে কথা হয় পলিটিক্স নিউজের সঙ্গে।

পলিটিক্স নিউজ: রাজনীতিতে কিভাবে আসলেন?

ইঞ্জিনিয়ার নোমান: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মূলত আমার পরিবার থেকে পাওয়া। আমার পরিবার সব সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ ও পালন করত। আমি ছোটবেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের বইগুলো পড়তাম। এসকল কারণে ছোটবেলা থেকেই আমার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও দলের প্রতি ভালোবাসা, অনুরাগ তৈরি হয়েছিল। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর আমি সক্রিয় রাজনীতি শুরু করি। ভর্তির দু-এক দিনের মধ্যেই ছাত্রলীগে নাম লেখাই। আমি তখন সোহরাওয়ার্দী হলে থাকতাম। সেখানেই ছাত্রলীগের সকল কর্মসূচিতেই আমি অংশগ্রহণ করতাম। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সকল দেয়াল লিখন আমি লিখে দিতাম। পরবর্তীতে আমি ১৯৯৭ সালে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সোহরাওয়ার্দী হলের ভিপি নির্বাচিত হই। আমি ১৯৯২ সালে যখন বুয়েটে রাজনীতি শুরু করি তখন ছাত্রলীগের অবস্থান ছিলো চতুর্থ। সেখান থেকে ৪ বছরের মধ্যে আমরা ছাত্রলীগকে প্রথম অবস্থায় নিয়ে আসি।

পলিটিক্স নিউজ: বুয়েট ছাড়ার পর আপনার পেশাগত জীবনে রাজনৈতিক পথ চলা কিভাবে?

ইঞ্জিনিয়ার নোমান: বুয়েট ছাড়ার পর আমি চাকরিতে জয়েন করি। তখন সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আমি মানুষের পাশে থাকি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ভোলায় ব্যাপকভাবে আওয়ামী লীগ নিধন চলে। সে সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তখন আওয়ামী লীগ পরিবারের অনেক ছেলেই ঢাকায় আশ্রয় নেয় এবং কর্মসংস্থান খুঁজতে থাকে। তখন তাদের মধ্যে যারা আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল আমি তাদের সবাইকেই আর্থিক সহায়তা করেছিলাম। এমনকি যে ইব্রাহিমের কথা আপনারা জানেন, জাতীয় সংসদ ভবনের ভিতরে হত্যা করা হয়েছিল সে আমার কাছে এসেছিলো। আমি তাকে প্রতিমাসে আর্থিক সহায়তা করতাম। পরবর্তীতে তার জনপ্রিয়তার কারণে তাকে হত্যা করা হয়। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোলা ৩ এর প্রার্থীর পক্ষে আমি মাঠে কাজ করেছিলাম। ২০১০ সালের উপনির্বাচনেও আমি নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আমি ভোলার ৩টি আসনের প্রার্থীর পক্ষে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করেছি।

পলিটিক্স নিউজ: আশির দশকে আপনি যে ভোলা দেখেছেন সেটার সাথে আজকের কি পার্থক্য দেখছেন?

ইঞ্জিনিয়ার নোমান: ২০০৮ সালের আগের বাংলাদেশের সাথে যেমন বর্তমান বাংলাদেশের তুলনা হয়না তেমনি আমার ছোটবেলার ভোলার সাথে এখনকার ভোলার কোন তুলনা হয় না। ভোলায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দেশের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহন করেছেন এবং ভিশনারি অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়ায় দেশের অমূল পরিবর্তন হয়েছে। দেশের সকল সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফূলি টানেল, পাওয়ার প্লান্ট সহ ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কাজ হচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ টি জেলার মানুষ এখন পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করছে তেমনি বড় বড় প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সারাদেশের মানুষ এর সুফল পাবে।আমাদের ভোলারও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ভোলার চারপাশে নদী ভাঙ্গন ছিল সবচেয়ে বড় সমস্যা। বর্তমানে ভাঙ্গন অনেকটাই আটকানো গিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার নানা কর্মসূচি নিয়ে এটি আটকিয়েছেন। যেটুকু বাকি আছে খুব তাড়াতাড়ি সেটারও কাজ শেষ হবে।ভোলায় ৪ লেন রাস্তার কাজ চলছে। এই রাস্তার কাজ শেষ হলে মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও বাড়বে।আমাদের সময় ভোলায় তেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ভবন ছিলো না। বর্তমানে নতুন নতুন সব কিছু হচ্ছে।

পলিটিক্স নিউজ: ভোলাকে নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?

ইঞ্জিনিয়ার নোমান: আমাদের ভোলায় প্রচুর পরিমাণে গ্যাস সম্পদ রয়েছে। সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে অনেক ইন্ডাস্ট্রি গড়া যেতে পারে। আমার নির্বাচনী আসন ভোলা-৩ এ রাস্তাঘাটের অবস্থা কিছুটা খারাপ। এটা আরো ভালো করা প্রয়োজন। ভোলাতে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে গ্যাস ব্যবহার করে সার কারখানা, স্টিল ইন্ডাস্ট্রিসহ গ্যাস ব্যবহারকারী অনেক কল কারখানায় তৈরি হতে পারে।ভোলায় বড় বড় ইন্ড্রাষ্টি ও কল কারখানা না হওয়ার কারণ হলো বড় বড় ব্যবসায়ীদের ভোলাকে নিয়ে কন্ডফিডেন্স না থাকা। তারা হয়তো ভাবে এখানে আসলে তারা নানা সমস্যায় পড়তে পারে। তাই রাজনৈতিক নেতারা সহযোগিতা করলে ভোলায় প্রচুর বিনিয়োগ বাড়বে। আবার ভোলা ব্রিজ না হওয়ায় আমাদের যোগাযোগের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বড় বড় কল কারখানা হচ্ছে না। আমাদের ভোলা-বরিশাল সেতুটা প্রয়োজন। ভোলার ইলিশ অনেক বেশি সুস্বাদু। আমরা চাইলেই প্রক্রিয়াজাত করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাহিরে রপ্তানি করতে পারি। আমি চাই ভোলার ব্যাপক উন্নয়ন হোক। ভোলার মানুষ ভালো থাকুক। অনেক বেশি বিনিয়োগ আসুক এতে বহু কর্মসংস্থান হবে। ভোলার মহিষের দইয়ের দেশে ব্যাপক সুনাম রয়েছে। আমরা যদি মহিষের দইকে ইন্ডাস্ট্রি ফর্মে নিয়ে আসি তাহলে সারাদেশে দিতে পারবো পাশাপাশি মহিষের মাংস রপ্তানি করতে পারবো। আমরা ভোলার কর্মজীবী মানুষদের ঢাকামুখী না করে ভোলায় কাজে লাগাতে পারি। এতে ভোলার অনেক বেশি উন্নয়ন হবে। এখানকার জনজীবনের মান বৃদ্ধি পাবে।

পলিটিক্স নিউজ: আপনি কি কি সামাজিক কার্যক্রমে জড়িত?

ইঞ্জিনিয়ার নোমান: ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার নামে একটি ফাউন্ডেশন রয়েছে। এ পর্যন্ত আমি এখানে ৪ কোটি টাকা দিয়েছি। এই ফান্ডে আমি প্রতিবছর টাকা বৃদ্ধি করি। এই ফাউন্ডেশন মূলত শিক্ষা নিয়ে কাজ করে এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য নিয়েও কাজ করে । আমাদের সকল কার্যক্রম হলো গরীর মানুষদের নিয়ে। আমাদের ফাউন্ডেশন থেকে জেলার মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয়। যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় A+ পায় আমরা তাদের বৃত্তি দেই। এছাড়া বেশ কিছু এতিমখানায় আমি প্রতি মাসে ফান্ড দিয়ে থাকি। এ পর্যন্ত ৫০০ মসজিদে আমি অনুদান দিয়েছি এবং ২টি ২তলা মসজিদ নিজের অর্থায়নে করে দিয়েছি। আমার বাবার নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি যা পুরোটা আমার অর্থায়নে। প্রতিমাসে ১৫ লক্ষ টাকা আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দিয়ে থাকি। এ সকল কাজ করে আমি খুব আনন্দ পাই। আমার কিছু সহযোগিতায় আমার জেলার মানুষের উপকার হচ্ছে এটাই আমার বড় পাওয়া।