বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকাতে সব দেশকে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ‘গ্লোবাল হাব অন লোকালি লেড অ্যাডাপটেশন’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোকে তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের সুযোগ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানাই। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য সবাইকে আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ক্ষতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু অভিযোজনে সরকার এখন আমাদের জিডিপির ৬ বা ৭ শতাংশ ব্যয় করে। আমরা সম্প্রতি ২০২৩-২০৫০ এর জন্য জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা চালু করেছি। ২০০৯ সালে আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি। এ পর্যন্ত তহবিল থেকে জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন উভয়ের জন্য ৮শ’টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) বাস্তবায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় উৎস থেকে আমাদের ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন থেকে অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে ৫০-৫০ সংস্থানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় অংশীদার হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ন্যাপ বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার অধীনে করা কাজের পরিপূরক হবে। প্যারিস চুক্তির চেতনায় এই প্রচেষ্টায় আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে আমি আমাদের আন্তর্জাতিক সরকারি-বেসরকারি অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানাই।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এ অঞ্চলের মানুষের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করে আসছে। তারা বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য বিপদের বিরুদ্ধে এক ধরনের সহিষ্ণুতা অর্জন করেছে। তারা প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাইয়ে নিতে শিখেছে। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে জলবায়ু অভিযোজন কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের স্থানীয় জনগণের কাছে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং সমাধান রয়েছে। আমাদের সরকার সম্পদ এবং উদ্ভাবনের সঙ্গে সেই সমাধানগুলোকে সহায়তা করে। এই সমন্বয়টি স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন ব্যবস্থাগুলোর সফল করছে।
দুযোর্গকালীন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণীর আশ্রয় দিতে আমরা সারাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছি। সাধারণত এই কেন্দ্রগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে কাজ করে। উপকূলীয় সবুজ বেল্ট কর্মসূচিও অব্যাহত রয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে ঘর দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য আমরা প্রায় এক মিলিয়ন আধা-পাকা দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করেছি।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের খুরুশকুলে জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় বহুতল আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ করছি। ইতোমধ্যে ১৩৯টি বহুতল ভবনে সেখানে প্রায় ৫ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী ফসল উদ্ভাবনের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা লবণাক্ততা, খরা এবং বন্যা-সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছি। সবজি উৎপাদনের জন্য ভাসমান কৃষি এখন ব্যাপকভাবে প্রচলিত।
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছে বলেও জানান তিনি।
সরকার ‘গ্লোবাল হাব অন লোকাললি লেড অ্যাডাপটেশনকে’ সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
স্বাধীনতার পর উপকূলের মানুষকে দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা দিতে ‘মুজিব কেল্লা’ নির্মাণসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন অবদানের কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।