জাতীয় সংসদের হুইপ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে, সরকারের অধীনে নয়। সংবিধান মোতাবেক নির্বাচনকালিন সরকারের কোন এখতিয়ার নেই নির্বাচন বিষয়ে কোন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকার। এমনকি তফসিল ঘোষনার পর ১ লক্ষ টাকার টেন্ডার আহবানের ক্ষমতাও সরকারের হাতে থাকবে না। সরকার কেবলমাত্র রুটিন কাজ কর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বর্তমান নির্বাচিত সরকার দায়িত্বে অব্যাহত থাকবে কেবলমাত্র গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য।
আজ বুধবার (২৬ জুলাই) জয়পুরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে সাবেক সংসদ সদস্য, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাছ আলী মণ্ডলের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম ভাগে ১১৯ দফার ১ -এর ক,খ,গ,ঘ এবং ২ উপদফায় স্পষ্ট করে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিপূর্ণ দায়িত্ব, কর্তব্য ও ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত রয়েছে। ১২০ এবং ১২৬ দফায় নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কতৃত্ব নিরঙ্কুশ ও আনচ্যালেঞ্জড করা আছে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে ইচ্ছাপোষণ করবেন, সেভাবে দায়িত্ব পালন করা প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীর কর্তব্য এবং কোন কর্মচারী এর ব্যতয় করলে নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের আইনানুগ যেকোন অভিপ্রায় পালন করতে সরকার বাধ্য। তফসিল ঘোষনার পর সরকার নির্বাচন কমিশনের পূর্ব- অনুমোদন ব্যতিত কোন কর্মচারী বদলী পর্যন্ত করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, ক্ষমতার বৈধতা প্রদানের নিমিত্তে নির্বাচনের নামে প্রহসন করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে বিরাজনীতিকরণ ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন করে দেশরক্ষায় নিয়োজিত আইনানুগভাবে অস্ত্রবহনকারী কর্তৃপক্ষের বেআইনী ব্যবহারের মাধ্যমে অনির্বাচিত ও গণবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের ক্ষমতা দখল এবং পাকিস্তানের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পৃথিবীর অপরাপর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আদলে বাংলাদেশের নির্বাচন সংক্রান্ত পূর্ণ কতৃত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত একজন রংহেডেড দূর্নীতিবাজের জেদের কারনে সংবিধান সংশোধন করে গণতন্ত্রের ক্রমবিকাশ ধ্বংস করা সম্ভব নহে। জাতির জন্য এহেন আত্মঘাতী কর্মে নিয়োজিত হওয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে সমীচীন নয়।
হুইপ বলেন, সংসদ থেকে বিএনপির মাননীয় সংসদ সদস্যগণের পদত্যাগের তুঘলকি সিদ্ধান্ত পরিকল্পিতভাবে সংকটের উদ্ভব ঘটিয়েছে। কিন্তু এখোনো সংবিধানের ৫৫ দফা এবং ৫৬ দফার ১,২,৩ ও ৪ উপদফা অনূযায়ী নির্বাচনকালিন সরকারে বিএনপির অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। তবে, ২০১৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু- কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক তৎকালিন বিরোধী দলের নেতাকে ফোন করার পর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে সেজন্য সরকার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপিকে সরকারে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব নয়। তারা চাইলে তাদের বিদেশী প্রভুদের সাথে এবিষয়ে আলোচনা করে দরজা উন্মুক্ত করতে পারেন।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আরিফুর রহমান রকেটের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক হুইপ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার এমপি, জেলা সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডল, আওয়ামী লীগ নেতা মোল্লা শামসুল আলম, এডভোকেট মমিন আহমেদ চৌধুরী, এস এম সোলায়মান আলী, এডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান, মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, হাফিজার রহমান, সুমন কুমার সাহা, এবিএম মাসুদ রেজা, মিলন দেওয়ান, জাকারিয়া হোসেন রাজা প্রমুখ।
এর আগে হুইপ আক্কেলপুর উপজেলায় ৫টি গ্রামীণ সড়ক পাকাকরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ৪টি গ্রামে দোয়া মাহফিল ও জন-আকাঙ্ক্ষা বিষয়ক মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন।