বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দীর্ঘ ছয় বছর পার হলো রোহিঙ্গা সমাধানে সরকার কিছু করতে পারেনি। সরকারের ধারাবাহিক কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে শরণার্থী হিসেবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিএনপি নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ইতিহাসের অন্যতম গণহত্যার ৬ষ্ঠ বছর উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
রিজভী বলেন, বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দীর্ঘ ৬ বছর হয়ে গেল, অথচ এর কোনো সমাধান সরকার করতে পারেনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া উভয় বিএনপি সরকারের সময়েই মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে গ্রহণ করা হয়। শুধু তাই নয়, অচলাবস্থা কাটিয়ে নিশ্চিত করা হয় নিজ দেশে তাদের সময়োপযোগী প্রত্যাবাসন।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান নিজে ইয়াঙ্গুন গিয়ে তৎকালীন বার্মা সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন সেই দেশের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার জন্য। পাশাপাশি জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করেন জোরালো ভূমিকা পালনে। ফলস্বরূপ, ১৯৭৮ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। এক বছরের মাঝে একলাখ পাঁচ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
এরই ধারাবাহিকতায়, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাস্তবসম্মত ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নিশ্চিত করে শরণার্থীদের কার্যকরভাবে রাখাইনে প্রত্যাবাসন।
তিনি বলেন, দেশে—বিদেশে গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তির ক্রমাগত আহ্বান সত্ত্বেও, ফ্যাসিস্ট সরকার রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার হরণ করে চলেছে। ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায়, নিজ স্বার্থে শেখ হাসিনা একদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে নাগরিক প্রত্যাবাসনে বার্মাকে চাপ দিতে অপারগ ও অনিচ্ছুক অন্যদিকে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে তার অনুগত আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনে।
রিজভী তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বরাতে জানা যায়, সরকার নানা সময়ে ক্যাম্পের অন্তত ৩০টি স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে, অথচ রোহিঙ্গাদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে শিক্ষার বিকল্প নেই। এছাড়া ২০১৯ সাল থেকে দীর্ঘদিন ক্যাম্পগুলোতে ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়েছিল, যার ফলে শরণার্থীদের জন্যে কাজ করা সংস্থাগুলো তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।
বিশেষ করে সেখানে করোনাকালীন সময়ে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম এবং করোনা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে ইন্টারনেটের ব্যবহার মারাত্মকভাবে জরুরি ছিল। সেই সময়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংস্থাও এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
বিএনপির এ নেতা বলেন, সামগ্রিকভাবে এটি আজ স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের কোটি—কোটি সাধারণ মানুষ যেমন আওয়ামী অপশক্তির ধারাবাহিক নিপীড়ণের শিকার, তেমনি নির্যাতনের শিকার হতভাগ্য রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশের নাগরিকদের মতোই তারাও শিকার সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও জুলুমের।
রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবসে আমরা দাবি জানাচ্ছি, শরণার্থীদের ওপর হওয়া জনবিদ্বেষী সরকারের সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক অংশীদার, উন্নয়ন সহযোগী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পরামর্শ আমলে নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুষ্ঠু জীবনযাপন নিশ্চিতকরণ ও তাদের নিজ ভূমিতে পাঠানোর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আমরা একই সঙ্গে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি জোরদার ও কার্যকরী ভূমিকা অব্যাহত রেখে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবার জন্য।