নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্রকারীরা প্রস্তুত হচ্ছে আমরা (আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী) ও প্রস্তুত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, বিএনপির তিন নেতা বিদেশে গেছে, আবার জাতীয় পার্টির একনেতা বিদেশে গেছে। নির্বাচন আসলে অনেক কিছুই হয়। কিন্তু জনগণ পুরনো রাজনীতির করবে না।
সোমবার (২৮ আগস্ট) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)’র উদ্যোগে রাজধানীর রমনায় আইইবির সদর দফতরে উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই সব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু মাত্র তিন বছর সাত মাস ক্ষমতায় ছিলেন।
তিনি দেশ গঠনকে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাকে বাঁচতে দেওয়া হলো না। মীরজাফরের জায়গায় মোশতাক আর সেনাপতি ইয়ার লতিফের জায়গায় জিয়াউর রহমান ষড়যন্ত্র করেছে। তারা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচতে দেয়নি। জিয়াউর রহমান যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাহস না দিতো, তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে সাহস পেতে কিনা আমার সন্দেহ লাগে। হত্যা হত্যাকে ডাকে। একটা গোষ্ঠী জিয়াউর রহমানকেও হত্যা করেছে। জিয়াউর রহমান নিজেও বাঁচতে পারেনি। যে বুলেটে শেখ হাসিনা ও রেহানা কে পিতা হারা করেছে সেই বুলেটই খালেদা জিয়াকে বিধবা করছে। হত্যা হত্যাকে ডাকে আনে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য হত্যা ঘটানো হয়েছিল। ১৫ আগস্টের মাষ্টার মাইন্ড হলো জিয়াউর রহমান ও মোশতাক। সেই জিয়াউর রহমান ও মোশতাক জেল হত্যার মাষ্টার মাইন্ড। তা তদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করেছেন। একটা পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার মধ্যে দিয়ে মুক্তিযু্দ্ধের আর্দশকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্য ছিল। ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে মারতে পারেনি বলেই ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে প্রাইম টার্গেট করে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল।
তৎকালীন বিএনপির ক্ষমতা কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির ক্ষমতা আসার পরে ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। জয় বাংলা জাতীয় স্লোগান বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করা হয়েছে।
তারেক রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গেছে এমন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন,তারেক রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গেছে। লন্ডনের টেমস নদীর উপার থেকে ডাক দিলে মনে হয় বাংলাদেশ পানিতে ভেসে যাবে কিন্তু তা কখনো হবে না।
তিনি বলেন, আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে যদি জড়িত না থাকে তাহলে তিনি কোনো ইনডেমনিটি জারি করলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যা কারীদের কেন বিভিন্ন দূতাবাসের চাকরি দিয়েছিল। তিনি বাঁচতে পারেনি। হত্যা হত্যাকে ডেকে আনে।
প্রকৌশলীদের অবদান সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে উন্নয়নের জোয়ার বসে গেছে সেখানে প্রকৌশলীদের অবদান আছে।
তিনি বলেন, রাজনীতি করেন দয়া করে ষড়যন্ত্র করবেন না,রাজনীতি করেন দয়া করে মানুষ পুরানোর রাজনীতি করবেন না। ১৩-১৪ সালের মতো মানুষ পুরোনোর রাজনীতির করবেন না দয়া করে।আবার যদি বিএনপি ক্ষমতায় যায় তাহলে তারা গনতন্ত্র খিলে খাবে। তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করবে। বিএনপির হাতে ক্ষমতা গেলে এদেশে পাকিস্তান বানাবে। নির্বাচনের মাত্র চার মাস আছে তাই আপনাদের (প্রকৌশলী) দাবি দেওয়ার বিষয় আমরা বুঝি। কিন্তু এখন দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে,দেশকে বাঁচাতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রস্তুত হচ্ছে, আমরা ও প্রস্তুত আছি।
দেশের সবচেয়ে প্রাচীন পেশাজীবি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন,বাংলাদেশ (আইইবি)’র উদ্যোগে দেশের সকল প্রকৌশলীদের মধ্যে সরকারের উন্নয়ন ও শান্তির বার্তা দিতে এই সভার আয়োজন করা হয়। উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের সভাপতিত্বে করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর ও সঞ্চালনা করেন আইইবির সম্মানী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এস. এম মনজুরুল হক মঞ্জু।
আইইবির প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে আইসিটি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে৷ বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার ফলেই৷ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রকৌশলবান্ধব বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে।
আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এস.এম. মনজুরুল হক মঞ্জু বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রকৌশলীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছেন৷ আগামীতেও সরকারের উন্নয়ন ও দেশের শান্তি অটুট রাখতে সরকারকে যেকোন সহযোগিতা করবে প্রকৌশলীরা।
আইইবি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুল হুদা বক্তব্যে সরকারের কাছে দাবি জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নামকরা ৫ জন প্রকৌশলীকে নিয়ে একটি ‘প্রকৌশল সেল’ তৈরি করে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নগুলো মনিটরিং করার সুযোগ করে দিতে হবে। ফলে উন্নয়নের সকল কর্মকান্ডগুলো সঠিক ও যথাযথ মনিটরিং করতে পারে।
আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন ডুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার এম. হাবিবুর রহমান বলেন, নেহেরুকে ভারত অনেক দিন পেয়েছিল বলে ভারত আজ অনেক দূর এগিয়েছে। নেহেরু যেমন ভিশনারি লিডার ছিলেন তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন ভিশনারি লিডার ছিলেন। কিন্ত আমাদের দূর্ভাগ্য যে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুবই কম সময় পেয়েছিলাম।
উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আইইবির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুজ্জামান, সাবেক আইইবির ঢাকা সেন্টারের সাবেক চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো: মনোয়ার হোসেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু), আইইবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন, ইঞ্জিনিয়ার রনক আহসান, ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম হাজারী, ইঞ্জিনিয়ার অমিত কুমার চক্রবর্তী,আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন, আইইবির ঢাকা কেন্দ্রের সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. নজরুল ইসলামসহ আইইবির বিভিন্ন কেন্দ্র, উপকেন্দ্র ও বিভাগের নেতৃবৃন্দ।