ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যকার অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও ১ দিন বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহনী।
বিজ্ঞপ্তিতে আইডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘জিম্মিদের মুক্তির প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টার আলোকে এবং প্রস্তাবিত শর্তাবলী সাপেক্ষে, অভিযান সংক্রান্ত বিরতি অব্যাহত থাকবে।’
আইডিএফের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী কাতার এবং মিসরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আরও একদিন বাড়ানো হয়েছে বিরতির মেয়াদ।
এর আগে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতি আরও বাড়তে পারে।
এই দু’বার বেড়ে মোট ৭ দিনে পৌঁছালো অস্থায়ী এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গত ২৫ নভেম্বর প্রথমবারের মতো চারদিনের যুদ্ধবিরতি দেয় হামাস-আইডিএফ। বিরতির শেষ দিন ২৮ নভেম্বর তার মেয়াদ আরও দু’দিন বাড়ানো হয়। বর্ধিত সেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ ৩০ নভেম্বর মধ্যরাতে।
তার আগেই উভয়পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে মেয়াদ আরও একদিন বাড়ল। নতুন হিসেব অনুযায়ী, আগামী ০১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে শুরু হবে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনী।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ১৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।
অন্যদিকে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক।
ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলার চালানোর দিন এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে শত শত সামরিক-বেসামরিক মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে গিয়েছিলেন হামাসের যোদ্ধারা। এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৮ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন।
গত নভেম্বরের মাঝামাঝি ইসরায়েলের যুদ্ধকালীণ মন্ত্রিসভার কাছে একটি প্রস্তাব পাঠায় হামাস। সেই প্রস্তাবে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েল যদি গাজা উপত্যকায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে, রাফাহ ক্রসিংয়ে অপেক্ষারত ত্রাণ, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে প্রবেশ করতে দেয় এবং ইসরায়েলি কারাগারগুলো থেকে অন্তত ১৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়, তাহলে নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে থেকে ৫০ জনকে ছেড়ে দেবে হামাস।
প্রথমে এ প্রস্তাবকে আমল না দিলেও পরে ইসরায়েলের নাগরিক, জিম্মিদের পরিবারের সদস্য ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে প্রস্তাবটি মেনে নেয় ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা।
গত ৭ দিনের যুদ্ধবিরতিতে মোট ৯৪ জন জিম্মিকে হস্তান্তর করেছে হামাস। এই জিম্মিদের মধ্যে ৭০ জন ইসরায়েলি এবং ২৪ জন অন্যান্য দেশের নাগরিক।
অন্যদিকে একই সময়সীমায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১৮০ জন ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, প্রতি ১০ জন জিম্মির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ একদিন করে বাড়াতে রাজি আছে ইসরায়েল।
সূত্র : রয়টার্স, সিএনএন