দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় নতুন সংসদ সদস্যরা (এমপি) শপথ নেবেন এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভা সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
নিয়মানুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়াবেন। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নামে মঙ্গলবার গেজেট প্রকাশ করা হয়। কারা থাকছে নতুন মন্ত্রিসভায়, কেমন হচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভা সে বিষয়ে সবার মাঝে রয়েছে কৌতূহল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হতে যাওয়া পঞ্চম মন্ত্রিসভায় নতুন কারা স্থান পাচ্ছেন, পুরনোদের মধ্যে কারা বাদ পড়ছেন, কে কোন দপ্তর পাচ্ছেন–এসব নিয়েই চলছে আলোচনা। সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতির ওপর।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব পাবে। প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় এমন ব্যক্তিরাই প্রাধান্য পেতে পারেন, যারা সামনের দিনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। ক্লিন ইমেজ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মক্ষমতাও মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস বা তার নিচের হলে সাধারণত মন্ত্রিসভায় স্থান পান না। বর্তমান মন্ত্রিসভার একজন ছাড়া সবাই নূন্যতম ডিগ্রি পাস। এছাড়া মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সও কিছুটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। গত মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হওয়ার সময় বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীর বয়স ছিলো ৭২ বছর। এ ছাড়া ২০১৯ সালে মন্ত্রিসভা গঠনের সময় বাকি সবাই ছিলেন ৭০ বছরের নিচে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় ৪৭ সদস্যের মধ্যে ২৭ জন প্রথমবারের মতো ঠাঁই পেয়েছিলেন এবং ২০ জন ছিলেন পুরাতন মন্ত্রিসভার। এবার মন্ত্রিসভায় পূর্বের ১৪ থেকে ১৫ জন এবং নতুন ২৬ থেকে ২৮ জন স্থান পেতে পারেন। কিছু মন্ত্রণালয় প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে।
ক্লিন ইমেজ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা ও বয়সের ভিত্তিতে নতুন মন্ত্রিসভায় আলোচনায় আছেন ৭৭ জন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে রংপুর বিভাগের ৩৩ টি সংসদীয় আসনের ৮ জন, রাজশাহী বিভাগের ৩৯ টি সংসদীয় আসনের ৭ জন, খুলনা বিভাগের ৩৬ টি সংসদীয় আসনের ৮ জন, বরিশাল বিভাগের ২১ টি সংসদীয় আসনের ৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ২৪ টি সংসদীয় আসনের ৪ জন, ঢাকা বিভাগের ৭০ টি সংসদীয় আসনের ২১ জন, সিলেট বিভাগের ১৯ টি সংসদীয় আসনের ৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮ টি সংসদীয় আসনের ১৯ জন।
পুরনোদের মধ্যে আলোচনায় ১৯ জন: পুরনোদের মধ্যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। আবার মনোনয়ন পেয়েও জয়ী হতে পারেননি আরও তিনজন। ফলে তাদের দপ্তরে দেখা যাবে নতুন মুখ। এই ছয়জন ছাড়াও আরও ২২ থেকে ২৪ জন বাদ পড়তে পারেন।
পুরনোদের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় আলোচনায়:
পঞ্চগড়-২ মো. নুরুল ইসলাম সুজন, দিনাজপুর-২ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী-৬ মো. শাহরিয়ার আলম, বরিশাল-৫ জাহিদ ফারুক, পিরোজপুর-১ শ ম রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল-১ ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ-৩ জাহিদ মালেক , ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা-৩ নসরুল হামিদ বিপু, গাজীপুর-২ জাহিদ আহসান রাসেল, সুনামগঞ্জ-৩ এম এ মান্নান, শরীয়তপুর-২ এ কে এম এনামুল হক শামীম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আনিসুল হক, কুমিল্লা-৯ তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা-১০ আ হ ম মুস্তফা কামাল, নোয়াখালী-৫ ওবায়দুল কাদের, চট্টগ্রাম-৭ ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চাঁদপুর-৩ ডা. দীপু মনি।
নতুনদের মধ্যে আলোচনায় ৫৮ জন:
দিনাজপুর-৩ ইকবালুর রহিম, লালমনিরহাট-৩ অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, রংপুর-২ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-৩ সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে, গাইবান্ধা-৩ উম্মে কুলসুম স্মৃতি, গাইবান্ধা-৫ মাহমুদ হাসান রিপন, জয়পুরহাট-২ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বগুড়া-৫ মজিবুর রহমান মজনু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, নওগাঁ-৩ সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, সিরাজগঞ্জ-১ তানভীর শাকিল জয়, পাবনা-৫ গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, কুষ্টিয়া-৩ মাহবুবউল আলম হানিফ, ঝিনাইদহ-৩ মো. সালাহ উদ্দিন মিয়াজী, যশোর-২ ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন, যশোর-৩ কাজী নাবিল আহমেদ, নড়াইল-১ বিএম কবিরুল হক, বাগেরহাট-৩ হাবিবুন নাহার, খুলনা-১ ননী গোপাল মণ্ডল, খুলনা-৩ এসএম কামাল হোসেন, বরগুনা-২ সুলতানা নাদিরা, পটুয়াখালী-৩ এস এম শাহজাদা, টাঙ্গাইল-৬ আহসানুল ইসলাম টিটু, টাঙ্গাইল-৮ অনুপম শাহজাহান, জামালপুর-৫ আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ-৪ মো. মোহিত উর রহমান, ময়মনসিংহ-১০ ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, নেত্রকোণা-৪ সাজ্জাদুল হাসান, কিশোরগঞ্জ-১ সৈয়দ জাকিয়া নূর, কিশোরগঞ্জ-৪ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, মুন্সীগঞ্জ-২ সাগুফতা ইয়াসমিন, ঢাকা-৮ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-৯ সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১৩ জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৭ মোহাম্মদ এ আরাফাত, গাজীপুর-৩ রুমানা আলী, নরসিংদী-২ আনোয়ারুল আশরাফ খান, নারায়ণগঞ্জ-২ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, রাজবাড়ী-১ কাজী কেরামত আলী, শরীয়তপুর-১ মো. ইকবাল হোসেন, সুনামগঞ্জ-১ রনজিত চন্দ্র সরকার, সুনামগঞ্জ-৪ মোহাম্মদ সাদিক, সিলেট-৩ হাবিবুর রহমান হাবিব, মৌলভীবাজার-২ শফিউল আলম চৌধুরী, হবিগঞ্জ-৩ আবু জাহির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ফয়জুর রহমান, কুমিল্লা-১ ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, কুমিল্লা-৭ ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, কুমিল্লা-৮ আবু জাফর মোহাম্মদ শামীম, চাঁদপুর-১ ড. সেলিম মাহমুদ, ফেনী-১ আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নোয়াখালী-৪ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী, লক্ষ্মীপুর-২ নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, কক্সবাজার-২ আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ সাইমুম সরওয়ার কমল, পার্বত্য খাগড়াছড়ি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
নারী সংসদ সদস্যের মাধ্যে ২ জন, সনাতন ধর্মালম্বী থেকে ২ জন এবং সদ্য সাবেক আমলা থেকে নির্বাচিত ৪ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২ জন মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদে ৪৭ জন মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে ২৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী আর ৩ জন ছিলেন উপমন্ত্রী। এ ৪৭ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ৯ মন্ত্রী ও ১ উপমন্ত্রী, ঢাকা বিভাগ থেকে ৭ মন্ত্রী, ৫ প্রতিমন্ত্রী ও ১ উপমন্ত্রী, রংপুর বিভাগ থেকে ৩ জন মন্ত্রী ও ২ জন প্রতিমন্ত্রী, রাজশাহী বিভাগ থেকে ১ জন মন্ত্রী ও ২ জন প্রতিমন্ত্রী, খুলনা বিভাগ থেকে ৩ প্রতিমন্ত্রী ও ১ উপমন্ত্রী, বরিশাল বিভাগ থেকে ১ জন মন্ত্রী ও ১ জন প্রতিমন্ত্রী, সিলেট বিভাগ থেকে ৩ মন্ত্রী ও ২ প্রতিমন্ত্রী, ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে ১ জন মন্ত্রী ও ৪ জন প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ছিলো ৬ মন্ত্রণালয়।