সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের আগে যেভাবে নির্বাচন কমিশনে সম্পদের বিবরণী দিতে হয়; সেভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরিতে যোগদানের আগে সম্পদের বিবরণী দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
পাশাপাশি যে ব্যবস্থায় দুর্নীতি হচ্ছে সেই ব্যবস্থারও একটা পর্যালোচনার প্রস্তাব করেন তিনি।
বুধবার (২৬ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এসব প্রস্তাব করেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আজকে ১৭ হাজার লোক মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। দিতে হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলার। কি হচ্ছে কেউ কোনো কিছু জানে না। এই যে ১৭ হাজার লোক যেতে পারলো না – এটা নিয়ে কোনো কথা নেই। এই লোকগুলো যারা জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছে, তাদের টাকা কোথায় গেছে- এটার মধ্যে কারো কোনো আগ্রহ নেই। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না, এভাবে একটা দেশের উন্নয়ন আসতে পারে না। দুর্নীতির সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনা আমরা দেখেছি চিন্তাই করা যায় না। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব দেয় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। দুর্নীতির অভিযোগ ১০০ কোটি টাকার নয়; হাজার হাজার কোটি টাকা। ওনারা এয়ারপোর্ট দিয়ে চলে গেছেন। কত লোককে এয়ারপোর্টে থামানো হয়েছে, যেতে দেওয়া হয়নি, পরে কোর্টের পারমিশন নিয়ে যেতে হয়েছে। আজকে বলা হচ্ছে কোর্টের পারমিশন ছিল তাই তারা চলে গেছেন। কীভাবে গেল তারা। আজকে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে – একটি দেশ চলতে পারে না। বছরের পর বছর তারা এগুলো করেছে, তারা কী দেখেছে, তাদের কাজ কী , এই সংস্থাগুলোর সামনে কি দুর্নীতির কোনো ছাপ পড়েনি?
তিনি বলেন, আজকে সময় এসেছে এই দুর্নীতি নিয়ে, এই ব্যবস্থা নিয়ে একটা পর্যালোচনা করার। কেন, যারা দুর্নীতি করেছে তাদের শাস্তি চাই কিন্তু সাথে সাথে যে ব্যবস্থায় এই রকম দুর্নীতি হতে পারে সেই ব্যবস্থার একটা পর্যালোচনা দরকার। সেখানে আমি মনে করি একটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন করা উচিত। যারা বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা আছেন এবং অন্যান্য, আজকে আমরা যারা সংসদে আছি আমরা আমরা আমাদের একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে আসি। সম্পদের বিবরণী আমাদের দিতে হয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনকে। ঠিক সেই রকম আজকে যারা সরকারি চাকরিতে আসবেন তারা সেই স্টেটমেন্ট নিয়ে তাদের সরকারি চাকরিতে ঢোকা উচিত। তিনি যখন বের হয়ে যাবেন তখন সেই স্টেটমেন্ট দেখতে পাবেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আজকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এই বাজেটেও দিয়েছে। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে, এই জুন শেষে তাদের রিটার্ন দেওয়ার সময় হবে। রিটার্নে তারা সব টাকা দিয়ে দেবে কেউ তাদের আর ধরতে পারবে না। এই টাকা সাদা হয়ে যাবে। আমি ৩০ ভাগ দেব, আপনি ১৫ ভাগ দেবেন- চুরি করে এটা হতে পারে। আমি মনে করি এটা অনৈতিক। প্রথমত: অনৈতিক, দ্বিতীয় হচ্ছে যে আমি কেন আজকে টাকা দেব, আমি না দিয়ে পরের আরেক বছর আমি গিয়ে বলবো যে ১৫ ভাগ নিয়ে নেন। এই মুহূর্তে দেশের জনগণ দেখছে কীভাবে দুর্নীতি হচ্ছে, কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য সদস্য আছেন তারা সবাই তো দুর্নীতিবাজ না। কিন্তু সবার গায়ের ওপর গিয়ে পড়ছে, এটা বন্ধ করতে হবে।