জাতীয় গ্যাসগ্রীড পরিচালনাকারী রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড (জিটিসিএল) কে রক্ষার স্বার্থে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের অপসারণসহ ৩ দফা দাবীতে মানববন্ধন করেছেন জিটিসিএস কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ), জিটিসিএল অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসাসিয়েশন ও বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ, জিটিসিএলের নেতৃবৃন্দরা।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে জিটিসিএল ভবন আগারগাঁও এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তরা অভিযোগ করেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কারিগরি ও সিস্টেম লসের নামে গ্যাস চুরির দায় বেশির ভাগ জিটিসিএলের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। ফলে ৩০ বছর ধরে আর্থিক লাভে থাকা কম্পানিটি বিপুল ক্ষতিতে পড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১২১২.৩৩ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এই ক্ষতির ধারা অব্যাহত থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জিটিসিএল আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জিটিসিএল-এর ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষাকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অডিট অধিদপ্তর অননুমোদিত কারিগরি ক্ষতি (সিস্টেম লস) হিসাবভুক্ত করায় সরকারের ৫০৬.৫২ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি এবং ১৩৯.২৯ কোটি টাকা কর্পোরেট ট্যাক্স খাতে রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তি দিয়েছেন।
তারা বলেন, গত ১৯ আগস্ট পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান’র সভাপতিত্বে সকল পরিচালক ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জিটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিমের সাথে সঞ্চালন সিস্টেমে আরোপিত সিস্টেম লস ও আর্থিক পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা- পর্যালোচনার জন্য সভা আহ্বান করা হয়। অনুষ্ঠিত সভায় চুলচেরা বিশ্লেষন করে ১ জানুয়ারী ২০২৩ হতে কার্যকর করে জিটিসিএল এর সিস্টেম লসের বিষয়টি মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্থগিত করে প্রশাসনিক পত্র জারি করা হয়।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, পেট্রোবাংলায় অনুষ্ঠিত গত ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত ফলোআপ সভায় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে বলেন, ‘গত সপ্তাহে জিটিসিএল এর কতিপয় অর্থলিদু, উশৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারী পেট্রোবাংলায় এসে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে কার্যকরকৃত প্রকৃত মিটারিং ব্যবস্থার যে আর্থিক শৃংখলা তা স্থগিত করিয়েছে। সিস্টেম লসের কারণে জিটিসিএল যে আর্থিক ক্ষতি হবে তা মোকাবেলায় জিটিসিএলকে সঞ্চালন মার্জিন ০.৪৭৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১.০২ টাকা করা হয়েছে।” যা সম্পূর্ন বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ন। দায়িত্বশীল পদে আসীন একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার এ ধরণের অশালীন এবং অভদ্রচিত বক্তব্য জিটিসিএল কর্মকর্তা -কর্মচারিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তিনি স্বৈরাচারী কায়দায় মনগড়া গল্প সাজিয়েছেন। তিনি সিস্টেম লসের নামে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গ্যাস সেক্টর থেকে হাজার হাজার টাকা লোপাট করেছেন। ব্যক্তিত্বহীন লুটেরা এই চেয়াম্যান গ্যাস সেক্টরকে তছনছ করে দিয়ে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যখন যা খুশি তাই করে আসছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা বহু আগেই লিমিট ক্রস করেছে। তিনি জ্বালানি সেক্টর কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।
বক্তরা আরও বলেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে পরিচালিত জিটিসিএল পরিচালনা পর্ষদকে সরকার কর্তৃক পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়েছে। পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদানকৃত জিটিসিএল পরিচালনা পর্ষদের ২৫ জুলাই ২০২২ এ অনুষ্ঠিত ৪৬২ তম সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এর নেতৃত্বে কোম্পানির ৬ষ্ঠ সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদিত হয়। কোম্পানির অর্গানোগ্রাম অনুমোদনের পর পেট্রোবাংলায় অবহিতকরণের জন্য প্রেরণ করা হলে পেট্রোবাংলা জিটিসিএল বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত অর্গানোগ্রামের কারিগরি ক্যাডারের নতুন সৃষ্ট ৪৪% পদ, সাধারণ ক্যাডারের নতুন সৃষ্ট ৬৪% পদ, ও অর্থ ও হিসাব ক্যাডারের নতুন সৃষ্ট ৭৫% পদ বিলুপ্ত করে। দেশব্যাপী সঞ্চালন নেটওয়াক বৃদ্ধির ফলে কাজের পরিধি বৃদ্ধি ও সুষম ক্যারিয়ার প্লানিং বিবেচনা না করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব কর্তৃক অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম পেট্রোবাংলা কর্তৃক সিনিয়র সচিবের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকেই কোম্পানির নতুন সৃষ্ট পদের প্রায় ৫৫% কর্তন করে। যা ছিল অবিবেচনা প্রসুত এবং জিটিসিএল কাজের পরিধির সাথে সম্পূর্ন বেমানান।
তারা আরও বলেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ক্ষমতার দাপটে মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে, গায়ের জোড়ে পেট্রোবাংলার বোর্ডে জিটিসিএল এর অর্গানোগ্রাম উত্থাপন করেন। যা পেট্রোবাংলার এখতিয়ার বর্হিভুত। এখানেও তিনি হটকারী এবং স্বেচ্ছাচারী এবং জাতীয় গ্যাস গ্রীডের ক্যারিয়ার প্লানিং ধ্বংসকারীর ভূমিকায় অবর্তিন হয়েছেন। তিনি মন্ত্রণালয় মানেন না, সরকার মানেন না। জনেন্দ্র নাথ সরকার নিজেই একটি সরকার। তার দান্তকিতা, স্বৈরাচারী আচরণ গ্যাস সেক্টর ধ্বংস করার অব্যাহত ষরযন্ত্রে সকলেই অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। চেয়ারম্যান নামক এই দানব কে অপসারণ করা না হলে জ্বালানি সেক্টর খুব দ্রুতই ধ্বংসের মুখোমুখি পৌছে যাবে। ব্যাক্তিগত স্বার্থে অন্ধ, দুর্নীতিবাজ এই অপশক্তির হাত থেকে গ্যাস সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ মুক্তি চায়।
মানববন্ধনে বক্তরা ৩ টি দাবি উপস্থাপন করেন।
দাবীসমূহ হলো:
১. অবিলম্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর পেট্রোবাংলার স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান জনেনন্দ্রনাথ সরকারকে অপসারণ করতে হবে।
২. গ্যাস সরবরাহের চুরির অংশ সিস্টেম লসের নামে অন্যায় ভাবে জিটিসিএল এর উপর চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।
৩. জিটিসিএল এর উপর চাপিয়ে দেয়া বৈষম্যমূলক অর্গানোগ্রাম দ্রুত সংস্কার করতে হবে।