জাতীয় গ্যাসগ্রীড পরিচালনাকারী রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড (জিটিসিএল) কে রক্ষার স্বার্থে ৩ দফা দাবীতে কর্মবিরতি পালন করছেন জিটিসিএলের কর্মকর্তা – কর্মচারীরা।
গত মঙ্গলবার থেকে তারা কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন।যার কারনে জিটিসিএলের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
জিটিসিএলের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কারিগরি ও সিস্টেম লসের নামে গ্যাস চুরির দায় বেশির ভাগ জিটিসিএলের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। ফলে ৩০ বছর ধরে আর্থিক লাভে থাকা কম্পানিটি বিপুল ক্ষতিতে পড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১২১২.৩৩ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এই ক্ষতির ধারা অব্যাহত থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জিটিসিএল আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জিটিসিএল-এর ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষাকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অডিট অধিদপ্তর অননুমোদিত কারিগরি ক্ষতি (সিস্টেম লস) হিসাবভুক্ত করায় সরকারের ৫০৬.৫২ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি এবং ১৩৯.২৯ কোটি টাকা কর্পোরেট ট্যাক্স খাতে রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তি দিয়েছেন।
তারা বলেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে পরিচালিত জিটিসিএল পরিচালনা পর্ষদকে সরকার কর্তৃক পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়েছে। পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদানকৃত জিটিসিএল পরিচালনা পর্ষদের ২৫ জুলাই ২০২২ এ অনুষ্ঠিত ৪৬২ তম সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এর নেতৃত্বে কোম্পানির ৬ষ্ঠ সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদিত হয়। কোম্পানির অর্গানোগ্রাম অনুমোদনের পর পেট্রোবাংলায় অবহিতকরণের জন্য প্রেরণ করা হলে পেট্রোবাংলা জিটিসিএল বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত অর্গানোগ্রামের কারিগরি ক্যাডারের নতুন সৃষ্ট ৪৪% পদ, সাধারণ ক্যাডারের নতুন সৃষ্ট ৬৪% পদ, ও অর্থ ও হিসাব ক্যাডারের নতুন সৃষ্ট ৭৫% পদ বিলুপ্ত করে। দেশব্যাপী সঞ্চালন নেটওয়াক বৃদ্ধির ফলে কাজের পরিধি বৃদ্ধি ও সুষম ক্যারিয়ার প্লানিং বিবেচনা না করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব কর্তৃক অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম পেট্রোবাংলা কর্তৃক সিনিয়র সচিবের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকেই কোম্পানির নতুন সৃষ্ট পদের প্রায় ৫৫% কর্তন করে। যা ছিল অবিবেচনা প্রসুত এবং জিটিসিএল কাজের পরিধির সাথে সম্পূর্ন বেমানান।
তারা আরও বলেন ,পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কোম্পানির সঞ্চালন পাইপলাইনসমূহ পূর্ণ সক্ষমতায় ব্যবহৃত হচ্ছে না। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের অতি উৎসাহ এবং বাক্তিগত স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের ফলে প্রতিষ্ঠানটি ঋণের ভাড়ে জর্জরিত। অপরদিকে গ্যাসের জোগানের নিচ্ছয়তা না থাকলেও চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে এবং পাঁচটি প্রকল্প গ্রহণের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছ। উক্ত নয়টি প্রকল্পে প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। নতুন প্রকল্পসমূহ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের লুটপাটে সহযোগিতার জন্য নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তাদের ৩ দফা দাবি সমূহ হলো:
১. গ্যাস সরবরাহের চুরির অংশ সিস্টেম লসের নামে অন্যায় ভাবে জিটিসিএল এর উপর চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত জরুরী ভিত্তিতে বাতিল করতে হবে।
২. বৈষম্যমুলক অর্গানোগ্রাম দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে আন্ত ক্যাডার বৈষম্য দূর করে কোম্পানিতে সুষ্ঠ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. অপ্রয়োজনীয়, অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।