আমার সোনার বাংলা সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলা হোক, এই প্রত্যাশা

গত ৬ অক্টোবর দুপুরে বনানী স্টার কাবাব এন্ড রেস্টুরেন্টে আমার উপর হামলার ঘটনায় প্রকৃত সত্য জনগণের কাছে তুলে ধরায় দেশের সকল গণমাধ্যম কর্মী ভাই ও বন্ধুদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনারা পাশে না থাকলে আমি হয়তো এই ঘটনার বিচার চাওয়া পর্যন্ত যেতে পারতাম না। অন্যায় দেখে সবাই মুখ চেপে চলে আসে। পঁচা বাসি খাবার একাধিক গ্রাহককে দেওয়া যত কম টাকার বিষয়ই হোকনা কেনো, তা অন্যায়। তাই প্রতিবাদ করেছি।

রক্তাক্ত হয়েও এক ঘন্টা রক্ত ঝরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থেকে আমার গণমাধ্যম কর্মী বন্ধু ও আইনের লোকদের জন্য অপেক্ষা করে এই ঘটনার বিচার ও শাস্তি দাবী করেছি। আমি বিশ্বাস করতে চাই, বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে না।

বিশ্বাস করতে চাই, জাতীয় সংগীতের মতো আমার সোনার বাংলা সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলা হবে, আমরা ইউরোপ আমেরিকার মতো অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হওয়ার আগে চারিত্রিক ও ব্যবহারগত ভাবে তাদের মতোই উন্নত হবো । তাই রক্ত ঝরলেও আমি এই ক্ষুদ্র বিষয়ের প্রতিবাদ করেছি কিছু ভালো পরিবর্তনের প্রত্যাশায়।

৬ অক্টোবরের ঘটনায় আমার করা মামলায় ইতোমধ্যে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে, একদিন জেল খেটেছে। আমি মামলা চলমান রাখলে তারা কয়েক মাস হয়তো জেল খাটতে হবে। আমি মনে করি, তারা তাদের মালিকপক্ষের ক্ষমতার দাম্ভিকতায় আমার উপর আক্রমণ করেছে, আমাকে রক্তাক্ত করেছে। তারা হয়তো ভেবেছিলো, বনানী তাদের এলাকা, এখানে কেউই তাদের আইনের আওতায় আনতে পারবে না। তাদের এই ধারণার সত্যতা ৬ অক্টোবর রাতে আমি মামলা করতে গেলে দেখতে পাই। তাদের জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালী জায়গা থেকে ফোন আসা শুরু হয়। তবে আমি একজন গণমাধ্যম কর্মী হওয়ায় এবং পাশে আমার গণমাধ্যম কর্মী বন্ধুরা নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়ানোয় তারা আমাকে দমাতে ব্যর্থ হয়। আমি মামলা করে তাদের গ্রেফতার করাতে সক্ষম হই।

আমার প্রত্যাশা ছিলো, আইনে উর্ধ্বে কেউ নয়, আইনের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নয় সেই বার্তা সবার কাছে যাক৷ আমার প্রাথমিক প্রত্যাশা সফল হয়েছে। দেশের মানুষ দেখেছে, খাবারের বিষয়ে সচেতন হয়েছে। সকল রেস্টুরেন্ট খাবারের মানের বিষয় সতর্ক হবে, তারাও জানবে পঁচা খাবার দিলে তারাও আইনের আওতায় আসতে বাধ্য।

স্টার কাবাব এর পক্ষ থেকে গত দুদিন বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে ক্ষমা চেয়েছে। ১১ জন গ্রেফতারকৃত কর্মচারী যারা আমার উপর হামলা করেছিলো, তারাও নানাভাবে ক্ষমা চেয়েছে, অনুতপ্ত হয়েছে, তাদের পরিবারের কথা বলে মাফ করে দিতে বলেছে । মামলা চলমান রাখলে তাদের হয়তো কয়েক মাস জেল হবে। আমি চেয়েছিলাম একটি গুণগত পরিবর্তনের সূচনা, যা আশাকরি শুরু হয়েছে। ১১ জনের পরিবার, বাবা মা, সন্তানের দিকে তাকিয়ে স্টার কাবাব এন্ড রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে আমি ক্ষমার জন্য কিছু শর্ত দিয়েছি।

স্টার কাবাব কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে ও কোনপ্রকার চিকিৎসা ব্যয় বা আর্থিক ক্ষতিপূরণ আমি না নিয়ে ২০০০ এতিমকে স্টার কাবাব কর্তৃপক্ষ একবেলা বিনামূল্যে খাওয়ালে তাদের উপর করা মামলা প্রত্যাহার করার কথা ভাবছি।

১. স্টার কাবাব এন্ড রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে পঁচা খাবার দেওয়া এবং গ্রাহককে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার জন্য গ্রাহক, সাংবাদিক সমাজ ও জনগণের কাছে নিঃশর্তভাবে লিখিত ক্ষমা চাইতে হবে।

২. তাদের সার্ভিস ও খাবারের মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি জনগণের কাছে লিখিতভাবে দিতে হবে।

৩. সব শাখার প্রত্যেক কর্মচারী, ম্যানেজার ও অন্যন্য কর্মকর্তাকে ভালো কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে একবার সদাচরণ ও গ্রাহকসেবার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়ে আনতে হবে।

৪. আমাকে কোন চিকিৎসা ব্যয় ও কোনপ্রকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না (আমি নেবো না), তবে ক্ষমার শর্ত হিসেবে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ২০০০ এতিমকে এতিমখানায় একবেলা বিনামূল্যে খাবার দিতে হবে।

একটি সুন্দর পরিবর্তনের প্রত্যাশায় আমার সেদিনের প্রতিবাদ। আশা করি আমার রক্ত ঝরা প্রতিবাদ থেকে একটি সুন্দর আগামীর সূচনা হবে। আমরা মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছি, যাতে মানুষ হয়েই মৃত্যুবরণ করতে পারি। সুন্দর, উন্নত, বৈষম্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে পারি। আল্লাহ সবার মনের নেক প্রত্যাশা পূরণ করুন। আমিন।

কৃষিবিদ সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলক
গণমাধ্যম কর্মী