গত ১৮ বছরে সংঘটিত সব গণহত্যায় জড়িতদের বিচার হবে : জামায়াত আমির

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সব গণহত্যায় জড়িত সবার বিচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ আগস্টে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার আগে করতে হবে। তারা বলত (আওয়ামী লীগ) আইন সবার জন্য সমান। সেই সমান আইনে তাদের বিচারের অধিকার আছে কিনা? তাদের তৈরি করা কালা-কানুনে দ্রুত তাদের বিচার করতে হবে। তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে যেন তাদের মাহরুম (বঞ্চিত) করা না হয়।

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে রোববার (১৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বার্ষিক সদস্য (রুকন) সম্মেলন-২০২৪ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নেতা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের মানবতা ও গণতন্ত্রকে জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে জবাই করা হয়েছে। ওই দিনটিতে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর বহু ত্যাগ প্রতীক্ষার পর গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ তার আপন পথ ফিরে পেয়েছে।

তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর সাজানো-পাতানো নির্বাচনে একটি দল ক্ষমতায় এসেছিল। সেই দলটির নাম এখন কেউ নিতে চায় না। আমরাও নেব না। তাদেরকে নিষিদ্ধ করার ইতিহাস আছে, যখন বাকশাল কায়েম করা হয়। সেই দলটিকে জনগণ আবার নিষিদ্ধ করেছে।

তিনি আরো বলেন, ক্ষমতায় আসার দুই মাস না যেতেই তারা সেনাবাহিনীর গায়ে হাত দিয়েছে। ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। সেনা অফিসারের মা বোনকে হত্যা করা হয়েছে। সেই জঘন্য ঘটনা জনগণ কখনো ভোলেনি। ঘটনার তদন্ত কমিটি হয়েছিল। কিন্তু একটা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত জানতে দেওয়া হয়নি। নেপথ্যের নায়ক হুকুমদাতাদের আড়াল করা হয়েছে। তদন্তের নামে জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। মিডিয়া হাতের পুতুল, বলির পাঁঠা ছিল। খুনিরাই ক্ষমতায় এসে খুনের রাজত্ব কায়েম করে দুঃশাসন উপহার দিয়েছে। তারা একসঙ্গে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়েছে, বিডিআরের নাম নিশানা মুছে ফেলেছে। শুধু ক্ষমতার লালসা ফুরানোর জন্য তারা এই কাজ করেছিল। ওই কুখ্যাত দলের নেতা-নেত্রীরা এ কাজ করেছিল।

জামায়াতের আমির বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে যাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে তারা জেলে, কিন্তু যারা নেপথ্যের নায়ক-নায়িকা তাদের পাওয়া বাকি। তাদের পাওনা তাদের পেতে হবে।

এতো এতো দল থাকতে জামায়াতে ইসলামীকে কেন টার্গেট করা হয়েছিল? প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কারণ তারা জানত একটি দল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ কারো কাছে কখনো বিলিয়ে দিতে, বিক্রি করতে রাজি হয়নি। কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। সেজন্য তারা জামায়াতে ইসলামীর মাথায় হাত দিয়েছিল। বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের দুনিয়া থেকে বিদায় করেছিল। আজ রাজপথের স্লোগান ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। জামায়াতে ইসলামীর স্লোগানও এটাই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।

dhakapost

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সব গণহত্যায় জড়িতদের হত্যার বিচার করতে হবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ আগস্টে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার আগে করতে হবে। শহীদের রক্ত এখনো তাজা, শহীদের পরিবার, স্বজনরা এখনো কাঁদছে। আহতরা এখনো কাতরাচ্ছে। আমাদের দাবি স্পষ্ট, বিচার হোক। এই বিচার করা খুবই সহজ সাক্ষীও জীবিত। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য গণহত্যায় জড়িতদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা অন্যায় জুলুম চাই না।

জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে হাজারো অপতৎপরতা চালানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এর উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়া। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ যাতে সোচ্চার হতে না পারে। চারদিক থেকে সব চাপ প্রয়োগ করে জামায়াতকে নড়তে দেওয়া হয়নি। মাঠে একতরফা খেলানো হয়েছে, শাহবাগে আসর বসানো হয়েছে। সেই আসরে আজেবাজে বিশেষ জিনিসও সাপ্লাই করা হয়েছে। সংসদ ভবন থেকে একজন চিৎকার করে বলেছিলেন, আমার দেহটা সংসদে, মনটা পড়ে আছে শাহবাগে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দুই-একজন আলেম নামের কলঙ্ক সেদিনের অপকর্মের অংশীদার হয়েছিলেন। আসলে তারা জ্ঞানী না, জ্ঞানপাপী। জাতি আজ তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে না।