৭ বছর পর মা-ছেলের আবেগঘন মিলন

চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডনে গিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেবারই জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে সবশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল।

এরপর আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি খালেদা জিয়ার। এ সময়ের মধ্যে মা-ছেলে এক হতে পারেননি। দুজনের কেউই বুকে আগলে নিতে পারেননি পরস্পরকে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে মুক্ত হন খালেদা জিয়া। সুযোগ আসে তার চিকিৎসার জন্য বিদেশযাত্রার। গতকাল মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যাত্রা করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময় বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখানে আগে থেকেই মায়ের প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলেন তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান। খালেদা জিয়া উড়োজাহাজ থেকে নামতেই মা-ছেলের মিলনখরার অবসান হয়। মাকে পেয়েই বুকে জড়িয়ে ধরেন তারেক রহমান। এ সময় সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।

পরে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হজরত আলী খান বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।

এর আগে মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি টারমাক থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহনকারী উড়োজাহাজটি লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়। মাঝপথে কাতারের দোহায় বিরতি নেয় এই বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠান কাতারের আমির তামিম বিন হাম্মাদ।

বিএনপি জানিয়েছে, খালেদা জিয়াকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে তার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বিএনপির চেয়ারপারসন লন্ডন সফরে করেছিলেন। এরপর তার আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি। এই সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানেরও সরাসরি দেখা হয়নি।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৮ সালে একটি মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়। এরপর থেকে কারাবন্দী ছিলেন তিনি। এ সময়টিকে বারবার অসুস্থ হন বিএনপি চেয়ারপারসন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে বিএনপি দীর্ঘদিন দাবি জানায়। পরিবারও কয়েকবার আবেদন করে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার কোনো দাবি বা আবেদনে সায় দেয়নি। ফলে দেশেই চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় চিকিৎসা চলছিল।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। এরপরই চিকিৎসার জন্য তার বিদেশ যাত্রার পথ সুগম হয়।