জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী আজ।

১৯৩৬ সালের এদিনে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জিয়াউর রহমানের ডাকনাম ‘কমল’। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলটি।

জিয়াউর রহমানের বাবা মনসুর রহমান পেশায় ছিলেন একজন রসায়নবিদ। বগুড়া ও কলকাতায় শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত করার পর জিয়াউর রহমান বাবার কর্মস্থল করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গণমানুষের কাছে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সমাদৃত। একজন সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও জিয়াউর রহমানের জীবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের সংকটে তিনি বারবার ত্রাণকর্তা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং দেশকে সে সংকট থেকে মুক্ত করেছেন। তিনি অস্ত্রহাতে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ শেষে আবার পেশাদার সৈনিক জীবনে ফিরে গেছেন। জিয়াউর রহমান সময়ের প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। তার গড়া সেই রাজনৈতিক দল তার সহধর্মিণী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত।

অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসিকতা, সততা-নিষ্ঠা ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমানের অবদান অসামান্য। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেন। আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশ্ব মানচিত্রে তিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের ব্যাপকভাবে পরিচিত করিয়েছেন স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে। জাতির মর্যাদাকেও বিশ্বব্যাপী সমুন্নত করেছেন তার শাসনামলে।

জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম দেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে এখনো স্মরণ করে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবেও তার পরিচিতি সর্বজনবিদিত। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও দিকনির্দেশনা। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি দেশের স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তারই সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তীতে নানা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের সেই চরম ক্রান্তিকালে সিপাহী-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান নেতৃত্বের হাল ধরেন।

রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছেন। জাতির মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে তাদের জাগিয়ে তুলতে তিনি সফল হয়েছিলেন। তার স্বল্পকালীন শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি যে গভীর দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন- তা আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেনি বলে অভিমত অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের।

এমনকি জিয়ার রাজনৈতিক বিরোধীরাও মৃত্যুর পর তার সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ কারণেই এ দেশের জনগণের অন্তরে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে শাহাদতবরণ করেন দেশপ্রেমিক এই রাষ্ট্রনায়ক। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে তাকে সমাহিত করা হয়।