মেয়েদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার নারী ও কিশোরীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি। এখন থেকে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ট্রান্স নারীদের নারী ক্রীড়া বিভাগে অংশগ্রহণের সুযোগ দিলে এবং নারীদের লকার রুম ব্যবহারের অনুমতি দিলে, সেই প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হবে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে সরকারি সংস্থাগুলোকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংগঠনগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে লিঙ্গভিত্তিক ক্রীড়া বিভাগ প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, প্রধান ক্রীড়া সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে ‘ন্যায়সংগত ও নিরাপদ নীতিমালা’ তৈরির আহ্বান জানানো হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, আমরা এখন থেকে প্রতিটি স্কুলকে সতর্ক করে দিচ্ছি—যদি তারা নারীদের ক্রীড়া দলে পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করে বা তাদের লকার রুমে প্রবেশের অনুমতি দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে এবং তারা কেন্দ্রীয় তহবিল হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।
নারীদের খেলায় ‘যুদ্ধ’ সমাপ্ত করার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, পুরুষদের হাতে নারী ক্রীড়াবিদদের মারধর দেখার জন্য তার প্রশাসন চুপ করে বসে থাকবে ন।
তিনি বলেন, আমরা এটি হতে দেবো না, এগুলো এখনই শেষ হচ্ছে। আমার কথার ওপর কেউ কথা বলতে পারবে না, কারণ আমরা কর্তৃত্বের সঙ্গে কথা বলি।
এছাড়া, ট্রাম্প আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে (আইওসি) চাপ প্রয়োগের ঘোষণা দেন, যাতে তারা ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের আগে লিঙ্গভিত্তিক অংশগ্রহণের বিষয়টি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে।
ট্রান্স নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের বিষয়টি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। যদিও বাস্তবে এ ধরনের ক্রীড়াবিদের সংখ্যা খুবই কম।
ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিকস অ্যাসোসিয়েশনের (এনসিএএ) প্রেসিডেন্ট চার্লি বেকার মার্কিন সিনেটের একটি প্যানেলকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে ৫ লাখ ২০ হাজার ক্রীড়াবিদের মধ্যে মাত্র ১০ জন ট্রান্স অ্যাথলেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন।
গণমত জরিপেও নারীদের খেলাধুলায় ট্রান্স নারীদের অংশগ্রহণের বিরোধিতা বাড়ছে। ২০২৩ সালের গ্যালাপ জরিপে ৬৯ শতাংশ মার্কিন নাগরিক বলেছিলেন, ক্রীড়া দলে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রত্যেককে তার জন্মলিঙ্গ অনুযায়ী খেলতে হবে। এই সংখ্যা ২০২১ সালের জরিপের ফলাফলের তুলনায় অন্তত সাত শতাংশ বেশি।
ট্রাম্পের আদেশকে স্বাগত জানিয়ে এনসিএএ প্রেসিডেন্ট বেকার বলেন, একটি পরিষ্কার ও অভিন্ন মানদণ্ড থাকা শিক্ষার্থী-ক্রীড়াবিদদের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে, যা বিভিন্ন রাজ্যের পরস্পরবিরোধী আইন ও আদালতের সিদ্ধান্তের পরিবর্তে একটি সুসংগত নীতি দেবে।
তবে এলজিবিটিকিউ অধিকার সংগঠনগুলো ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে। অ্যাথলেট অ্যালাই নামে একটি সংগঠন বলেছে, এই প্রশাসন জটিল বিষয়গুলোর সহজ সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছে, যা সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প গত জানুয়ারি ২০ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রান্সজেন্ডারদের বিরুদ্ধে চারটি নির্বাহী আদেশ সই করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—দুই লিঙ্গের স্বীকৃতি দেওয়া, সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডারদের প্রকাশ্যে সেবা নিষিদ্ধ করা এবং ১৯ বছরের নিচে লিঙ্গ পরিবর্তনের চিকিৎসার জন্য তহবিল বন্ধ করা।