টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। মাদারীপুরের এই সংসদ সদস্য এর আগে দায়িত্ব পালন করেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হিসেবে। দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারীও ছিলেন তিনি। ১৯৮১ সালে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়া নাছিম পরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (তৎকালীন ইনস্টিটিউট) ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।
আগামী নির্বাচন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন পলিটিক্সনিউজ এর সাথে ।
সরকারের গত দুই মেয়াদে বিভিন্ন সময় সংকট তৈরির চেষ্টা দেখা গেছে। সামনেই নির্বাচন, এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনাদের কৌশল কি?
ক্রাইসিস তৈরির নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেকের অনেক প্লান আছে, তারা সেই প্লান নিয়ে এগুতে চায়। কিন্তু আমাদেরও তো একটা প্লান আছে। আবার মাঝামাঝিতেও অনেকে এগুতে চায়। ক্রাইসিসগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে, কিন্তু সফল হয়নি। সেসব থামিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
নানা সময়ে বিভিন্ন সংগঠনকে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে দেখা গেছে। পরিবহন সেক্টরে সরকারেরই দায়িত্বশীলদের ইন্ধনে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়েও অস্থিরতা দেখা গেছে। সরকারের চেয়েও ক্ষমতাবান হতে চাওয়ার এই চেষ্টা কিভাবে দেখছেন?
সবক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম দরকার। রাজনীতিও তো এর বাইরে নয়। কোনো কোনো সময় এ সমস্যাগুলো প্রকট হয়েছে, আবার কখনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে। সেগুলোকে রাজনৈতিক কৌশলেই থামানো হয়।
এটাও ঠিক, এখনো হাওয়া ভবনের মত কিছু হয়নি। বিএনপির আমলে তো সেটাই সরকারের চেয়ে বড় হয়ে গিয়েছিল।
চালের দাম নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ আছে, যা নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে…
আমাদের তো খাদ্য সংকট নেই, বন্যায় কিছু ক্ষতি হয়েছে; ফলে সব মিলিয়ে আমরা ঝুঁকির জায়গায় নেই।
চালের দাম বেড়েছে, সেটা কমানোর চেষ্টা চলছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে তো সবাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে দাম কমানো যায় না। ১/১১ এর সময় যেটা হল, উল্টা দাম বেড়েছে।
কিন্তু আমরা ১০ টাকায় চাল বিক্রি করছি। চালের দাম কমেছে, আরও কমে আসছে। যে ক্রাইসিসটা তৈরি করা হচ্ছিল, সেটা অল্প সময়ে কিভাবে আমরা মোকাবেলা করলাম সেটা জনগণ দেখবে না?
নির্বাচন কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলছে। সামনে আওয়ামী লীগও সংলাপে যাবে, আপনাদের কি ধরনের প্রস্তাবনা থাকতে পারে?
অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা প্রয়োজন সেভাবে ব্যবস্থা নিতে বলব আমরা।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করছে অনেকেই। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কি হবে?
পৃথিবীর কোথাও এমনটা আছে? আমরাও সেটা চাই না। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ব্যবহার এদেশেই হয়েছে, ২০০১ সালে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ছিল। আর সেটা কি নির্বাচন হইছে তা তো আমরা দেখেছি। এটা এদেশের মানুষ চায় না, আমরাও চাই না।
সেনাবাহিনীর বিষয়ে যেটা হতে পারে সর্বোচ্চ জেলা বা বিভাগে রাখা; সেটাও আলোচনার বিষয়।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আপনারা কি ভাবছেন? দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচনকালীন সরকার হবে, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আর আমরা খণ্ডিত নির্বাচন করতে চাই না। দখলদারি, ভোটের অধিকার হরণ চাই না। আমরা চাই নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করুক। এরপর যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তখন আপনারা কথা বলেন। এখানে আগাম কথা বলার সুযোগ তো নেই।
বিএনপি নির্বাচনের বিষয়ে সংলাপ চায়। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা কি হবে?
আমাদের সমাজে বিএনপির কথার গুরুত্ব তো কিছুটা হলেও রয়েছে। সেক্ষেত্রে আলোচনা-সমঝোতা তখনই সম্ভব; যেখানে আদর্শগত, নীতিগত বা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ জড়িত। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় স্বার্থ নাই; ব্যক্তিগত, ব্যক্তি নির্ধারিত, কোন দলের নিজস্ব স্বার্থে আওয়ামী লীগ কেন যাবে?
আর ভিতর থেকে তো আলোচনা চলছে, অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। সর্বোচ্চ গেলে এটাই হবে।
বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রুপরেখা দেওয়ার কথা বলছে। আওয়ামী লীগ বিষয়টি কিভাবে দেখবে?
রাজনীতির মাঠে তারা তাদের কথা বলবে, আর প্রতিদিন তো বলতেই আছে। বিএনপি ও খালেদা পচা রাজনীতি করে, এরা এভাবেই পচে যাবে। ব্রিফিংয়ের রাজনীতি আর মানুষের জন্য, দেশের জন্য রাজনীতি করার মধ্যে ব্যবধান আছে।
আগামী নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ জরিপের কথা বলে আসছে। এই জরিপ প্রক্রিয়াটা কিভাবে হচ্ছে?
দলীয়ভাবে পর্যালোচনা হচ্ছে। আবার বেসরকারি সংস্থা, এনজিও, এমনকি বিদেশি সংস্থাও আছে; সেভাবেই জরিপ হবে। এগুলো কাজ করে, অতীতেও দেখা গেছে জরিপের পর্যালোচনা পজিটিভ হয়; জরিপটা যে ভিত্তিহীন হয় এমন না।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, রাশিয়া, চীনের অবস্থান আওয়ামী লীগ কিভাবে নিচ্ছে?
আমেরিকার প্রেসিডেন্টের একটা নিজস্ব ভাবনা আছে, আবার তার রাষ্ট্রীয় একটা ভাবনাও আছে। এখন সেই ভাবনায় পরিবর্তন আসেনি?
মোদি মিয়ানমারে যা বলেছেন, এখন কি সেখানে আছেন? সেটায় পরিবর্তন আসেনি? রাশিয়া-চীনের ভাবনায় পরিবর্তন আসেনি?
ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, এটা চিন্তা করা যায়! আর এসব সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের কূটনৈতিক সফলতায়।
কিন্তু সংকটকালে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে…
এখনকার বিশ্বব্যবস্থায় অন্ধভাবে বিষয়টি বলা যাবে না, সব জায়গায়ই স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় থাকে। এখন কেবল যুক্তরাজ্য অন্ধভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে মানছে, আবার যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের কথা শুনছে। অন্য কোন দেশই কিন্তু এমন না। যুক্তরাজ্যই তো যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্যদের মানে না, না হলে বেক্সিট কিভাবে হলো?
নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দল সরব হচ্ছে। নতুন দল গঠন হচ্ছে, জোট হচ্ছে; এসব কিভাবে দেখছেন?
এর অনেকগুলোই হচ্ছে জামায়াতের ইন্ধনে। এগুলো থাকবে, কিন্তু এরা জনমতের উল্লেখযোগ্য অংশ না। জামায়াতের এত আওয়াজ, কিন্তু তারা নির্বাচনে কয় ভাগ ভোট পেয়েছে? বিভিন্ন নির্বাচনে তারা ৫ ভাগ ভোটও পায়নি। এসব নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
নির্বাচনে নিজ আসনে আপনার ব্যক্তিগত প্রত্যাশা কি?
এই নির্বাচনেও দল আমাকে মনোনয়ন দিবে, জনগণ আমাকে ভোট দিবে; এবং আমি জিতবো- এই প্রত্যাশার কোনো ঘাটতি নেই।