আ.লীগের ৪ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন অক্টোবরে

অবশেষে আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ চার সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের জাতীয় সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর মধ্য অক্টোবরেই শুরু হচ্ছে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ এবং তাঁতী লীগের সম্মেলন কার্যক্রম।

দলীয় সূত্র জানায়, আজ সোমবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা থেকে এই চার সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। জানা গেছে, সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় যৌথসভা থেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ ক্ষেত্রে মধ্য অক্টোবর থেকে প্রতি শনিবার পর্যায়ক্রমে সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ১৫ অক্টোবর যুব মহিলা লীগ, ২২ অক্টোবর মহিলা আওয়ামী লীগ এবং ২৯ অক্টোবর ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রাথমিক তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ তাঁতী লীগের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত না হলেও এই তিন সংগঠনের সম্মেলন শেষে দ্রুতই এর আয়োজন হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্য সফর ও পরে জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর দেশে ফেরার পর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন বিষয়ে জোরালো তৎপরতা শুরু হয়েছে। অন্য তিন সংগঠনের নেতারা নির্দেশনা পাওয়ামাত্রই যে কোনো সময়ই সম্মেলন আয়োজনে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এই চার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই থেকে আড়াই বছর আগে। তবে বারবার তাগাদা সত্ত্বেও সম্মেলন আয়োজন বিষয়ে অনীহা দেখিয়ে আসছিলেন সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা।

সর্বশেষ গত ৭ মে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

এরপর ১০ মে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দেন। সংগঠনগুলোকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরে যোগাযোগ করে এবং দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছ থেকে সময় নিয়ে সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে বলেন তিনি।

বিশেষ করে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে দু’একদিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলে যোগাযোগ করে তারিখ নির্ধারণের কড়া নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের।

সূত্র মতে, ওই নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক এবং যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল সম্মেলনের তারিখ বেঁধে দিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরে লিখিত আবেদন জমা দেন। তবে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোনো চিঠি না দিয়ে বরং ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি’ দাবি করে এ নিয়ে সময়ক্ষেপণ করে আসছেন।

জানতে চাইলে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম এবং যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেছেন, সম্মেলনের তারিখ বা এ বিষয়ে এখনও কোনো পরিস্কার দিকনির্দেশনা তাঁরা পাননি। তবে যে কোনো সময় সম্মেলন আয়োজনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে তাঁদের।

ছাত্রলীগের তৎপরতা: ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতারা অক্টোবর মাসেই এ সংগঠনের সম্মেলন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এরপরই সম্মেলন আয়োজনে জোরালো তৎপরতা শুরু হয়েছে। আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে নেতৃত্বে আসার যোগ্যতাধারী ছাত্রনেতাদের জীবনবৃত্তান্ত ও কার্যক্রমের তালিকা সংগ্রহ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এখন হেভিওয়েট প্রার্থীদের অধিকতর তথ্য সংগ্রহের কাজও চলছে।

২০১৮ সালে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের পর পেরিয়ে গেছে চার বছর। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব নেওয়ার পরও পেরিয়েছে প্রায় তিন বছর। দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্বে থাকলেও আশানুরূপ সাংগঠনিক শক্তি অর্জনে ব্যর্থতার অভিযোগ আছে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে। আছে অছাত্র, বিবাহিত ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের পদ দেওয়ার অভিযোগও। এর মাঝে সম্মেলনপ্রত্যাশী নেতাদের তোপের মুখে একাধিকবার পড়েছেন তাঁরা দু’জন। তবে সম্মেলন করার কোনো উদ্যোগ নেননি তাঁরা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর কমিটির এক-তৃতীয়াংশ নেতা স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয় নিয়ে সমকালে গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ১০ সেপ্টেম্বর ছাত্রনেতারা অভিযোগ দিতে গেলে সেটি নিতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সেল অপারগতা প্রকাশ করে। তবে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার নেতা এ ছাত্রনেতাদের সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সব অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা পড়েছে। আগামী মাসের নির্ধারিত সময়েই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় আমরা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চলতি বছরের অক্টোবরেই ছাত্রলীগের সম্মেলনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’

ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অর্থাৎ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। পরে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আর্থিক কেলেঙ্কারির পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য হন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাদের পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন বলা হয়েছিল, তাঁরা শোভন-রাব্বানীর অবশিষ্ট মেয়াদের ১০ মাস অর্থাৎ ২০২০ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তবে তাঁরা এখনও স্বপদে বহাল আছেন।