কেন্দ্রীয় নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের তুঘলকি সিদ্ধান্ত

দলীয় বা স্বতন্ত্র যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীদের কাজ করতে কোনো বাধা নেই বলে ঘোষণা আছে খোদ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের। নির্বাচনী মাঠে মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগতা রাখতে দলের কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে পরিস্কার নির্দেশনাও।

তবে দলের সাধারণ সম্পাদকের পরিস্কার বক্তব্য ও কেন্দ্রীয় নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ এক তুঘলকি সিদ্ধান্ত দিলো। তারা এক নোটিশে বিলুপ্ত করেছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন কমিটি।

বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আকরাম হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল আলীম সুজা ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে এই নোটিশ পাঠান।

ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করে নোটিশের পর গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফাটছেন। নেতাকর্মীরা কে কার পক্ষে কাজ করবে না করবে সেজন্য কমিটি এভাবে বিলুপ্ত করা যায় কি না সেই প্রশ্নই তুলছেন তারা।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেন অবশ্য বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা না মানা এবং নৌকা প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অন্য প্রার্থীর জন্য কাজ করায় গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনী মাঠে দলের নেতাকর্মীরা তাদের ইচ্ছা মতো যার পক্ষে খুশি কাজ করতে পারবে বলে দলের অবস্থান পরিস্কার করেন।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, যারা দলের প্রার্থী বাদ দিয়ে অন্য প্রার্থীর কাজ করে তারা তো দলের সঙ্গে নেই। তারা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাদের দলে রাখব কোন হিসাবে? সবাই এমনেই চলেবে আমি দল চালাবো কী দিয়ে।’

ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমি যদি তাই করে থাকি , তাহলে তাই করেছি। দলীয় প্রার্থী আব্দুর রহমান সাহেবের নির্দেশে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’

অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মেনে গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে জানান আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল আলীম সুজা।

তিনি বলেন, ‘যারা দলের নির্দেশনা মানে না, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে না, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ বলছে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করতে, আমরা তাই আমরা করছি।’

শেখ আব্দুল আলীম সুজাকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘অন্য কে কি বলছে তা দিয়ে আমরা কি করবো।’

তবে আলফাডাঙ্গা উপজেলার শীর্ষ দুই নেতার বক্তব্য যুক্তি পেল না আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের কাছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এ নেতা সাফ বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো জায়গার কমিটি বিলুপ্ত করা যাবে না।’ কোন জায়গায় কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে ব্যবস্থা নিতে সেই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জানানোর পরামর্শও দিলেন হানিফ।

নির্বাচন ঘিরে কোথাও কোনো কমিটি বিলুপ্ত করা যাবে না মর্মে দলের কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কমিটি বিলুপ্ত না করতে আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এরপরও কোনো কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।’