তিনটি ইস্যু নিয়ে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের চিঠি দেবে বিএনপি
তিনটি ইস্যু নিয়ে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের চিঠি দেবে বিএনপি। ইস্যু তিনটি হলো বাংলাদেশে বর্তমানে গণতন্ত্রের সংকুচিত অবস্থা, বিরোধীদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ ও বিরোধী রাজনৈতিক জোটের শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন।
দলের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরে চলতি সপ্তাহেই একযোগে চিঠিগুলো পাঠানো হবে।
আগামী ১৬-২০শে এপ্রিল লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনকে সামনে রেখে এই চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির আন্তর্জাতিক কমিটি।
কমিটির সদস্যরা প্রত্যেকেই তাদের মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন। তারা জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সার্বিক বিষয়গুলো কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানদের অবহিত করা প্রয়োজন। কমনওয়েলথের দায়বদ্ধতার কারণেই বিএনপি’র পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের নানা অনিয়ম আর নির্যাতনের চিত্র দেশগুলোর সরকার প্রধানদের অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, বিএনপি’র কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত দলের বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক এডভোকেট ফাহিমা মুন্নী, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল ও তাবিথ আউয়াল অংশ নেন। বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে প্রধান করে এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে সঙ্গে চিঠিটি তৈরির দায়িত্ব পান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক কূটনীতিক রিয়াজ রহমান। সে বৈঠকের ধারাবাহিকতায় চিঠি তৈরি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার আরেকটি বৈঠক করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াজ রহমান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চিঠিতে উল্লেখ করা হবে- বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিশ্বাস করে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের ফলাফলের মাধ্যমই সরকার গঠন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র পথ। আর বাংলাদেশে রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা থেকে উত্তরণে একটি জনগণের সরকারের বিকল্প নেই। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলের একটিই কমন দাবি- একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ইতিহাস সুখকর নয়। অথচ নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করা ও ফলাফলে তার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি জনগণের সরকার গঠনে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে সবার দাবি নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন। চিঠিতে উল্লেখ করা হবে, বর্তমান সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলকে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ দিচ্ছে না। পুলিশি অনুমতির বেড়াজালে আটকে ফেলা হয়েছে বিরোধীদের রাজনীতি চর্চার অধিকার। বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের খুন-গুমসহ চলছে চরম দমন-পীড়ন। বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে বিচারবিভাগে প্রভাব খাটিয়ে সাজানো মামলায় সাজা দেয়ার মাধ্যমে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতে পর্যন্ত নতুন নতুন নজির সৃষ্টি করে তার জামিন প্রক্রিয়া প্রলম্বিত ও জামিন স্থগিত করে কারাবাস দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। কারাগারে প্রাপ্য মর্যাদাসহ সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না তিনি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে তাদের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সূত্র জানায়, কমনওয়েলথভুক্ত সরকার প্রধানদের কাছে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি সম্মেলন চলাকালে দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বাংলাদেশ ইস্যুতে আলোচনার উদ্যোগ নেবেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি’র নেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। উল্লেখ্য, কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ব্রুনেই, সাইপ্রাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, ক্যামেরুন, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া, জাম্বিয়াসহ এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ৫২টি দেশ। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবহিত করতে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কূটনীতিকদের দুই দফা ব্রিফ করেছে বিএনপি। সর্বশেষ ২১শে মার্চ কূটনীতিকদের ব্রিফে বিশেষ ২০টি পয়েন্ট উল্লেখ করেছিল বিএনপি।