ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিজের নির্বাচনি এলকায় গেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে পুলিশ তার বাড়ি ঘিরে রেখেছিল বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমার বলতে দ্বিধা নেই- যখনই এসপি ও ওসি’র সঙ্গে আমি কথা বলেছি তারা আকার-ইঙ্গিতে বলেছেন, মন্ত্রী (ওবায়দুল কাদের) সাহেবের নির্দেশ আছে, আপনাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া যাবে না। আর উনাকে (ওবায়দুল কাদের) জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটা আমাদের (বিএনপির) দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারনে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দলের মধ্যে কোনও বিভক্তি নেই। সুতরাং উনি (ওবায়দুল কাদের) মিথ্যা কথা বলেন, উনি মিথ্যুক। কারণ যে পুলিশ আমাকে বলেন, মন্ত্রী সাহেব এসেছেন, আপনি এলাকা থেকে চলে যান। আমি বলেছি, আমার লাশ যাবে। কিন্তু আমি যাবো না।’
বুধবার (২০ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
নোয়াখালীতে ১৩টি আসন রয়েছে উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, ‘১৯৭৯ সাল থেকে কোনও নির্বাচনে আমরা (বিএনপি) ১১টি আসন পেয়েছি। আবার কোনোবার ১৩টি আসনের সবগুলোই পেয়েছি। সুতরাং বলতে পারেন, নোয়াখালী বিএনপির একটি ঘাঁটি। তাই আমরা যাতে কেউ মাঠে নামতে না পারি, এজন্য পুলিশকে দিয়ে সরকার এগুলো করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ নিশ্চিত হয়েছে যে আগামী নির্বাচনে তাদের পরাজয় অবধারিত। এ কারণেই এ ধরনের আচরণ করেছে তারা। তাই আমরা বলতে পারি, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ কোনো আসনে জয়লাভ করতে পারবে না।’
“সাত দিন আমি বাড়িতে অবরুদ্ধ ছিলাম”- এমন অভিযোগ করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসেও একটি ইফতার মাহফিল আমি করতে পারিনি। কারণ ইফতার মাহফিল পুলিশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। এছাড়া ঈদের দিন আমি বড় মসজিদে এবং বড় জামাতে আমি নামাজ পড়তে পারিনি। কারন আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। তাই বাড়ির কাছে যে মসজিদ ছিল, সেখানেই নামাজ পড়তে হয়েছে।’
ঈদের দিন রাজনৈতিক নেতারা মতবিনিময় করে উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘ঈদের দিন বিকেলে আমার দুটি জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি যেতে পারিনি। কারণ আমার বাড়ির পাশের রাস্তা পুলিশ ট্রাক দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিল।’
বিএনপির সামনে এখন তিনটি বিষয় মুখ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রথমত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা (এজন্য যে আন্দোলন দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনে সেটা পরিবর্তন করা হবে), দ্বিতীয়ত- জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি, তৃতীয়ত- আগামী নির্বাচনে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জনগণের ভোট প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করা।’
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে স্বৈরাচার সরকারের পতন সম্ভব নয় মন্তব্য করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কর্মসূচি দেয়া হবে এবং সেই কর্মসূচি সফল হবে।’
এই কর্মসূচি কি ধরনের হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৯৬৯ এবং ৯০ সালে স্বৈরাচার পতনের যে ধরনের আন্দোলন হয়েছে। এবারও সেই ধরনের আন্দোলন হবে।’নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘সরকারের সকল অন্যায় ও অত্যাচারের জবাব আমরা দেবো। আর কিছুদিন অপেক্ষা করেন।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীসহ অন্যরা।