ফরিদপুর শহরে ‘ভয়ংকর’ বিএনপি নেতা ‘সন্ত্রাসী মাহবুব’

ফরিদপুর শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মাহবুব মিয়া। তবে তার রাজনৈতিক এই পরিচয় ছাপিয়ে গেছে ‘সন্ত্রাসী মাহবুব’ পরিচয়ে। ফরিদপুর শহরের মানুষের কাছে ‘ভয়ংকর’ চরিত্র মাহবুব এক মূর্তমান আতংকের নাম। পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও ছড়িয়ে গেছে তার নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

পুলিশের খাতায় একাধিক মামলার আসামি মাহবুবের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য প্রায় দু ডজন। তবে এই সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলে বিপদে পড়তে চান না। মাহবুবের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তিও অনেক। অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তার, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অন্যের জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িত মাহবুবের বাহিনী।

ফরিদপুর শহরের মানুষের কাছে ত্রাস মাহবুব শীর্ষ সন্ত্রাসী নোমান ইবনে বাশার ওরফে টিবিএস বাবুর চাচাতো ভাই। ১২টি হত্যা মামলা ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি টিবিএস বাবু বর্তমানে কারাগারে।

মাহবুব একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছেন। তবে বেরিয়ে এসে আরও বেড়েছে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। নিজের নামে বাহিনী গড়ে তুলে ফরিদপুর শহর ও আশপাশ এলাকায় কায়েম করেছে ত্রাসের রাজত্ব।

মাহবুব বাহিনীতে সক্রিয় অন্তত দু ডজন সদস্যের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখযোগ্য। তারা হলেন— নাজমুল হুদা বাশার, রতন খন্দকার, মুন্না মৃধা, রাকিব ওরফে কালু, শামীম খান, বড় মনা।
মাহবুব বাহিনীর এতটাই দাপট যে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা মুখ খুলতেই সাহস পান না। মাহবুবের মতো তার বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। তবে কিছুদিন কারাবাসের পর তারা জামিনে বেরিয়ে আবার জড়িয়ে পড়ে অপরাধ কর্মকাণ্ডে। রহস্যজনকভাবে এরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ফরিদপুর সদরের হাড়োকান্দি এলাকার মৃত আব্দুল জলিল মিয়ার ছেলে মাহবুব ও তার সহযোগিরা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ফরিদপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় মাহবুব।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তার, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অন্যের জমি দখল করাসহ নানা অপরাধে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে মাহবুব।
কারাবন্দি সন্ত্রাসী টিবিএস বাবুর ভাই নাজমুল হুদা বাশার মাহবুব বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড। প্রতারণা, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি বাশার নিজেকে পরিচয় দেন সাংবাদিক হিসেবে। ইউটিউবে ‘বিভিসি বাংলা টিভি’ নামে একটি চ্যানেল খুলে সাংবাদিকতার নামে তিনি চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।

মাহবুব বাহিনীর আরেক সদস্য রতন খন্দকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। কক্সবাজার থেকে ইয়াবার একটি চালান নিয়ে ঢাকা হয়ে ফরিদপুরে আসার পথে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) তাকে দুটি লোড করা বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ আটক করে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

মাহবুব বাহিনীর নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রকাশ্য হলেও তাকে গ্রেপ্তার না করায় ক্ষব্ধ ফরিদপুরের সচেতন মহল। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ কঠোর অভিযান না চালালে গোটা এলাকা এই বাহিনীর সন্ত্রাসের জনপদে পরিনত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল তাৎক্ষণিক ভাবে মাহবুব নামে কাউকে চিনতে পারছেন না বলে জানান।

মাহবুব মিয়া ওরফে সন্ত্রাসী মাহবুবের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে উল্লেখ করা হলে ওসি জলিল বলেন, ‘রেকর্ড দেখে তারপর বলতে হবে।’