কোন রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না: জিয়াউর রহমান
দলের আদর্শকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সর্বক্ষেত্রে কর্মসূচি এবং সেই কর্মসূচির বাস্তবায়ন রাজনৈতিক দলের জন্য অপরিহার্য। কারণ সংগঠন ছাড়া রাজনীতি করা যাবে না, কর্মসূচি বাস্তবায়িত করা যাবে না। কিন্তু সংগঠন যে আমরা করব সেই সংগঠনের ভিত্তি হতে হবে তার আদর্শ। তাই পার্টির সংগঠনে যারা থাকবেন তাদেরকে পার্টির আদর্শ অবশ্যই জানতে হবে। কেবলমাত্র জানলেই চলবে না সেটা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে। আমরা অনেক কিছুই জানি, অনেক কিছুই বুঝি, কিন্তু অনেক সময় বিশ্বাস করি না। সেই বিশ্বাস না থাকলে দল সংগঠন করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের দলে যারা রয়েছেন কর্মকর্তা, নেতৃবৃন্দ, যারা রয়েছেন কর্মী তাদেরকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শ জানতে হবে, বুঝতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে এবং সেই বিশ্বাসে অনুভূত হয়ে আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে হবে।
আমাদের পার্টি বলতে গেলে বছর দুয়েকের পার্টি। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর আমরা এই পার্টির সংগঠন করি। আজ এই দুই বছরের মধ্যে আমরা পার্টিকে মোটামুটিভাবে সংগঠিত করেছি কিন্তু পার্টির আইন-কানুনের প্রয়োজন। যদি আমাদের মধ্যে কেউ পার্টির আদর্শে বিশ্বাসী না হয় তবে সেই আইন-কানুন, সে মানতে পারে না কিংবা পার্টির কানুন অনুযায়ী সে কাজ করতে পারে না। তাই আজ আমাদের পার্টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো যে, আমাদের পার্টির সেই আদর্শকে আমাদের প্রত্যেককে আয়ত্তে আনতে হবে এবং সেই জন্যে আমরা পার্টির আদর্শে শিক্ষা গ্রহণ করতে চলেছি।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আগামী এক সপ্তাহ যে আমাদের শিক্ষা ক্লাস চলবে তাতে আপনারা যা কিছু জানেন, শিখেছেন, চিন্তাভাবনা করেছেন সেইগুলোও আপনাদেরকে বলতে হবে। আমাদের ক্লাস চলবে মোটামুটি আলোচনাভিত্তিক। সেখানে একচেটিয়া বক্তৃতা হবে না। ডায়েস থেকে বরঞ্চ আপনাদের মধ্য থেকে আপনারা আলোচনা করবেন, আপনাদের বক্তব্য রাখবেন। আপনারা যেটা বুঝতে পেরেছেন সেটা বলবেন যাতে করে আমরা আলোচনার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে যদি ভুল বুঝাবুঝি থাকে কিংবা জ্ঞানের ফাঁক থাকে সেইগুলো পূর্ণ করবেন।
আজ থেকে আমাদের যে শিক্ষা ক্লাস চলছে এটা অবশ্যই আমাদের পার্টির জন্যে কেবল গুরুত্বপূর্ণ নয় ঐতিহাসিকও বটে। কারণ এরপর সারা দেশব্যাপী এরকম শিক্ষার আয়োজন করব এবং যে চিন্তাধারা করেছেন বা বিবেচনা করেছেন এবং পারবেন। এই শিক্ষা ক্লাস শেষ হবার পর আমরা আপনাদের মধ্যে থেকেই ছোট ছোট গ্রুপ করে দিব এবং সেই গ্রুপগুলো জেলা পর্যায়ে গিয়ে এরকম আদর্শগত শিক্ষাশিবির আয়োজন করবেন। আপনারা অবশ্যই এই শিক্ষা ক্লাসের শিক্ষাশিবির আয়োজন করবেন। আপনারা অবশ্যই এই শিক্ষা ক্লাসের প্রোগ্রাম দেখেছেন, কর্মসূচি দেখেছেন। আমরা সাধারণত এইভাবে ক্লাস চালিয়ে যাব। সেখানে আমাদের আদর্শ সম্বন্ধে ইতিমধ্যে লিখিতভাবে বের হয়েছে। যেখানে বইতে লেখা রয়েছে সেটা পড়ার পর প্রাথমিকভাবে আমরা আর একটি লেকচার দিতে পারি এবং এরপর আপনাদের বক্তব্য রাখবেন। প্রতিদিন তার আগে নিজেরাই যাচাই করে নিতে পারবেন যে আপনারা কতদূর শিখলেন, জানলেন এবং কোথায় ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। কারণ জীবন হলো প্রতিদিনের একটি পরীক্ষা এবং সেই জন্যে আমরা যে কিছু শিখলাম নিশ্চয়ই সেটা আমাদেরকে যাচাই করে নিতে হবে যে, আমরা কি শিখলাম।
আমরা শিক্ষা কেন্দ্র খুলেছি, এই জন্যেই আমাদের যে টপ ব্রেন আছে পলিটিক্যাল পার্টিতে, তাদেরকে নিয়ে আমরা বসেছি। এই আদর্শগত দিকটি আপনাদেরকে আয়ত্তে আনতে হবে কারণ আয়ত্তে না আনলে আপনারা নিজেরাই কাজ করতে পারবেন না। আমাদের অনেকের মধ্যে এখনও দ্বন্দ্ব আছে। এটা মানসিকভাবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আপনাদের মনের মধ্যে। কারণ আপনারা অনেকেই কিন্তু এমনি এসে গেছেন পার্টিতে বিভিন্ন কারণে। এখন এই দ্বন্দ্ব দিয়েই আমাদের সব ঠিক করতে হবে। হয় থাকবেন না হয় থাকবেন না। এখন আমাদের সময় এসেছে। যেটা আটা চালে চালনি দিয়ে আমাদেরকে আদর্শের চালনি দিয়ে এখন বেছে নিতে হবে আপনাদেরকে।
কোন রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না। একটা অবদান থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে কখনই রাজনীতি করা যেতে পারে না। আমাদের এখানেই অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে যে ধর্মকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সময়ে যখনই রাজনীতি করা হয়েছিল সেটা বিফল হয়েছে। কারণ ধর্ম ধর্মই। আমাদের অনেকে আছে যারা আমাদের দেশে যে বিভিন্ন ধর্ম রয়েছে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেন। রাজনীতির রূপরেখা বানাতে চেষ্টা করেন এবং আমরা বার বার দেখেছি তারা বিফল হয়েছে। কেবলমাত্র মুসলমান নেতৃবর্গ নয়, হিন্দু নেতাবর্গের মধ্যে রয়েছে এবং অন্যদের দল ধর্মকে কেন্দ্র করে তাহলে কি দেখা যাচ্ছে একটা রাজনৈতিক দল ধর্মকে কেন্দ্র করে হতে পারে না। ধর্মের অবদান থাকতে পারে রাজনীতিতে। এটা মনে রাখবেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকে যে কথাগুলো আমি বললাম, আশা করি আপনারা বুঝলেন। আমি হাসি-ঠাট্টা করে অনেক কথা বলেছে কারণ সব সময় যদি সিরিয়াসলি বলি তাহলে আপনারা সবকিছু বুঝতে পারবেন না।(১৯৮০ সালে জিয়াউর রাহমান এর একটি ভাষণ )