মেয়েদের ক্রিকেটের শুরুর ইতিহাস
ক্রিকেট ইতিহাসের মতোই পুরনো মেয়েদের ক্রিকেটের ইতিহাস। ২৭২ বছর আগে শুরু হয়েছিল মেয়েদের ক্রিকেট। ১৭৪৫ সালে ইংল্যান্ডের সারের ব্রামলি গ্রামের ১১ জন গৃহপরিচালিকা ও হ্যমব্লেডন গ্রামের ১১ জন গৃহপরিচালিকার মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন মেয়েরা বল করল, ব্যাট করল, ফিল্ডিং করল, ক্যাচ ধরল। একটি ম্যাচে যা যায় হয় তার সবই হয়েছিল সেদিন। মার্কারির প্রতিবেদন অনুযায়ী ওটাই ছিল মেয়েদের প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ।
সেদিন উভয় দলের মেয়েরা সাদা পোষাক পরিধান করেছিল। ব্রামলির মেয়েরা মাথায় নীল ও হ্যামব্লেডনের মেয়েরা লাল ফিতা পরিধান করেছিল। হ্যামব্লেডনের করা ১২৭ রানের জবাবে ১১৯ রান করেছিল ব্রামলির মেয়েরা। ১৭৪৭ সালে ইংল্যান্ডে মেয়েদের আরো একটি ম্যাচ হয়। এরপর আরো অনেক মেয়েদের ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে। তবে ১৮৮৭ সালে প্রথম মেয়েদের ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠত হয়। ইয়র্কশায়ারে প্রতিষ্ঠিত ওই ক্লাবটির নাম ‘হোয়াইট হেদার ক্লাব’।
১৮৯০ সালে একটি দল গঠিত হয়। যার নাম দেওয়া হয় ‘অরজিনাল ইংলিশ লেডি ক্রিকেটার্স’। তারা ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে সফরে গিয়ে প্রচুর দর্শকদের উপস্থিতিতে ম্যাচ খেলে। ক্রিকেটে এই দলটি বেশ সাফল্য অর্জন করে। তখন থেকে ক্রিকেটের প্রতি ইংল্যান্ডের মেয়েদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। আগ্রহ বাড়তে থাকার পেছনে আরো কিছু কারণ ছিল। ক্রিকেট মূলত লন টেনিসের মতো অতোটা কষ্টসাধ্য নয়, স্কেটিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
১৯২৬ সালে ইংল্যান্ডের ‘উইমেন্স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৩৩ সালে ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো লেস্টারশায়ারের বিপক্ষে খেলে। আর ১৯৩৪ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কোনো সফরে অস্ট্রেলিয়ায় যায়। সেখানে তারা অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে মেয়েদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় ইংল্যান্ডের মেয়েরা। এরপর সেখান থেকে ইংলিশ মেয়েরা নিউজিল্যান্ড সফরে যায়। নিউজিল্যান্ড সফরে ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি নারী ক্রিকেটার ‘বেটি স্নোবল’ ১৮৯ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন।
অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেটের জননী বলা হয় কিংবদন্তি ‘লিলি পলেট হ্যারিস’কে। ১৮৯৪ সালে তিনি অস্টার কোভ দলকে নেতৃত্ব দেন। এই দলটিই ছিল অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশিক যুগের প্রথম কোনো নারী ক্রিকেট দল। এরপর ১৯০৫ সালে ‘ভিক্টোরিয়া উইমেন্স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা পায়। আর ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘অস্ট্রেলিয়ান উইমেন্স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন’। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের সব ধরণের ক্রিকেট ‘উইমেন্স ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগ’ কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৫৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স ক্রিকেট কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আস্তে আস্তে নারী ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ হতে শুরু করে। বর্তমানে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসসহ প্রায় প্রত্যেকটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশে নিয়মিত হচ্ছে মেয়েদের ক্রিকেট।
নারী ক্রিকেটের টেস্ট খেলুড়ে দেশের তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ পর্যন্ত মেয়েদের ১৩১টি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার অধিকাংশই অবশ্য ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া খেলেছে। প্রথম দিকে মেয়েদের টেস্ট ছিল তিনদিনের। কিন্তু ১৯৮৫ সাল থেকে দিনের সংখ্যা বেড়েছে। ১৯৩৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল ৮৭টি টেস্ট খেলেছে। জিতেছে ১৯টি। হেরেছে ১১টিতে। আর ড্র করেছে ৫৭টি। একই সময় থেকে আজ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দল খেলেছে ৬৭টি টেস্ট। জয় ১৮টিতে, পরাজয় ৯টিতে আর ড্র ৪০টিতে।
১৯৭৩ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। আজ শনিবার থেকে ইংল্যান্ডের শুরু হয়েছে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের একাদশতম আসর। ২০০৯ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আগামী বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসবে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ষষ্ঠ আসর।
শুধু তাই নয়, গেল দুই বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক মেয়েদের টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশও। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের ক্রিকেটও। ক্রিকেটের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। সূত্রঃরাইসিংবিডি