বগুড়ায় বিএনপিতে অনিশ্চয়তা আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী

বগুড়ায় বিএনপিতে অনিশ্চয়তা আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী

Bogra

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মামলায় জেল দেয়ার পর থেকে নির্বাচনের আমেজে ভাটা পড়েছে। নতুন করে আবারো সংশয় দেখা দিয়েছে নির্বাচন নিয়ে। কীভাবে হতে যাচ্ছে আসন্ন নির্বাচন- এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল।

জাতীয় রাজনীতিতে বগুড়া বরাবরেই আলোচিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি এর মূল কারণ। বগুড়ার রাজনীতিতে বরাবরের মতোই বিএনপি এগিয়ে। ১/১১’র দেশীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বগুড়ার রাজনীতিতেও বাহ্যিক পরিবর্তন দেখা দেয়। বিগত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় বগুড়ার সাত সংসদীয় আসনে আওয়ামী জোটের প্রার্থীরা এমপি নির্বাচিত হন। সাত এমপির ২টি আওয়ামী লীগ বাকি পাঁচটি জাতীয় পার্টি এবং জাসদের দখলে। আগামী নির্বাচনের বেশি দিন বাকি না থাকায় সব দলের প্রার্থীদের মধ্যে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। রাজনৈতিক মামলা এবং পুলিশের ধরপাকড়ের ভয়ে বিএনপি এবং জোটের শরিক দলগুলো অনেকটাই কোনঠাসা। বিএনপির কিছু নেতাকর্মী মাঠে থাকলেও বিগত বছরগুলোয় বড় কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। অপর দিকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রথম দিকে বগুড়ার রাজনৈতিক মাঠ দখল করে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি। কয়েক হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা এবং নেতাদের জেলে ঢোকানোর ফলে এক সময় জামায়াতও মাঠের বাইরে চলে যায়। এত কিছুর পরও গেল ইউপি নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের একাধিক প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তির জানান দিয়েছে তারা। প্রকাশ্যে তাদের কার্যক্রম না থাকলেও গোপনে তাদের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করেছে। আসছে নির্বাচনে সঙ্গত কারণেই জামায়াতের ভোটব্যাংক দুই বড় রাজনৈতিক দলের জন্য ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এজন্যই জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
বগুড়া-৬ আসনটি গঠিত সদরকে ঘিরে। আর তাই জেলার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এ আসনটি। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি প্রার্থী হতে না পারলে সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম। বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির নূরুল ইসলাম ওমর সম্ভাব্য প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হলে নুরুল ইসলাম ওমর এ আসনে জোটের প্রার্থী হবেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য মমতাজ উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে মমতাজ উদ্দিন প্রার্থী না হলে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান রনি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু সুফিয়ান সফিক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম রাজ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

অন্যদিকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে একধরনের টানাপোড়েন থাকলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বিএনপি। অনানুষ্ঠানিকভাবে চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ। বিভিন্ন স্থানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতাও শুরু হয়ে গেছে। ফলে তাদের নিয়ে আগ্রহ-আলোচনা বাড়ছে। দলের কেন্দ্রীয় ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের আসনগুলো অনেকটাই নির্দিষ্ট বলে সেগুলো নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে জেলহাজতে থাকায় কৌতূহল তৈরি হয়েছে নেতাকর্মী ও রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে।

ওদিকে টানা দুবার ক্ষমতায় থাকায় বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত বগুড়ায় আওয়ামী লীগ একটা শক্ত ভিত তৈরি করেছে। দলীয় যেকোনো প্রোগ্রামে নেতা কর্মীদের অংশগ্রহণ তেমনটাই বলে দেয়। অপরদিকে গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বগুড়ার প্রায় ইউনিয়নগুলোতেই নৌকার প্রার্থী জয়ী হয়েছে। দলটি দীর্ঘদিন থেকে তৃর্ণমূলকে গোছানোর জন্য কাজ করে আসছে। ফলে আগের চেয়ে আওয়ামী সমর্থকের সংখ্যা বেড়েছে। আগামী নির্বাচনে জেতার জন্য দলটি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থী কম থাকলেও এ আসনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন। কে পাবেন এ আসনে নৌকার টিকিট- সেই নিশ্চয়তা এখনো দেয়া যাচ্ছে না। তবে দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। তৃর্ণমূলে যাদের জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা বেশি বলে মনে হবে; দল তাকেই নৌকার টিকিট দেবে।

বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট থেকে এ আসনে নির্বাচন করেন বর্তমান এমপি নূরুল ইসলাম ওমর। তিনি আবারো জোট থেকেই মনোনয়ন চাইবেন। তবে শোনা যাচ্ছে জাতীয় পার্টি এবার একাই ৩০০ আসনে লড়বে। যদি তাই হয় তাহলে আপাতত বগুড়া সদর আসনে ওই দলের একমাত্র প্রার্থী তিনিই হবেন। এককভাবে নির্বাচন করলে ফল তার পক্ষে কতটুকু আসবে- তা নিশ্চিত নয়। যদিও তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বগুড়ায় তিনি বেশ উন্নয়ন করেছেন। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটাররা আবারো তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করবেন।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি অনেক বড় দল। সে কারণে নেতাও বেশি। আসছে নির্বাচনে সদর আসন থেকে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে সেটা কেন্দ্র ঠিক করবে। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে কিছু বলা যাবে না। তবে তিনি জানান, যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক না কেন বিএনপি প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনর সরকার জনগণের সরকার। বিগত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বগুড়ায় ব্যাপক উন্নয় হয়েছে। সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ আবারো আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে। তিনি আরো বলেন, বগুড়া সদর আসনে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। তিনি নিজেও ওই আসনে ভোট করতে পারেন।

জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি জানান, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিন যদি এ আসনে নির্বাচন না করেন তাহলে তিনি নৌকার টিকিটে আশাবাদী।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, এ আসনে দল থেকে অনেকেই মনোনয়ন চাইবেন। আমিও চাইবো। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে যাকেই দেয়া হোক সেই সিদ্ধান্তই মেনে নিয়ে দলের জন্য কাজ করবো।

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু বলেন, বগুড়ায় আওয়ামী লীগের জোয়ার উঠেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হবে বলে তিনি আশাবাদী। মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনিও দলীয় সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান করবেন।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু সুফিয়ান শফিক জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিন যদি ওই আসন থেকে নির্বাচন না করেন তাহলে সদর উপজেলা সভাপতি হিসেবে তিনিই মনোনয়ন পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেন।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম রাজ  নিজেকে ক্লিন ইমেজের উল্লেখ করে বলেন, এ আসনে যদি কেন্দ্র তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে তিনি নির্বাচন করে জয়ী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সূত্র: মানবজমিন