সরকারের আয়ু শেষ হয়ে আসছে দাবি করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ সুযোগ কাজে লাগান। আপনাদের তো আয়ু শেষ হয়ে যাচ্ছে। আরো ২০ দিন আছে। এই ২০ দিনের মধ্যে সময়কে কাজে লাগান। আপনাদের যদি কাজ করার সুযোগ চান আমাদের বলেন, আমরা সাহায্য করবো। কিছু একটি করুন। আল্লাহর ওয়াস্তে এই সুযোগগুলো নেন। আর কয়েকদিন পর তো সাধারণ মানুষ হয়ে যাবেন। আপনাদেরকে যেন ৩১ তারিখ মোবারকবাদ দিতে পারি সে সুযোগ দেন। কিছু ভালো কাজ করে না গেলে পরে আফসোস করবেন এই বলে যে সুযোগ পেয়েও কিছু ভালো কাজটি করলাম না!’
সোমবার (১০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজনীতি ও মানবাধিকার শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনের সময় মাঠে থাকবেন জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি তো আছিই। কথা বলছি, জনমত গঠন করছি, সমর্থন সৃষ্টি করছি। এই ৮০ বছর বয়সে এর চেয়ে আর কি করার আছে?’
মানুষ ভোট দিতে পারবে আশা করে তিনি বলেন, ‘মানুষ ভোট দিতে না পারলে স্বাধীনতা থাকবে না। আমরা সবাই ভোট দিব। রাস্তা-ঘাট, পাড়ায় মহলায় নেমে যান। ভোট চাওয়া অপরাধ নয়। সবাই জনগণের ভোট চান।’
এসময় তিনি ৫৮টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়াকে উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘এবিষয়ে আপনারাও সতর্ক হোন। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিক হিসেবে নিরব হয়ে গেলে চলবে না। নিজের বাড়ি দখল করে নেয়ার সময়ও চুপ থাকলে হবে না। প্রতিবাদ করতে হবে। ১৮ কোটি দেশের মালিক যদি এক হয়ে যাই, যদি মালিকানা ভোগ করার জন্য পাড়ায় মহল্লায় এক হয়ে যাই তারা কিছুই করতে পারবে না।
বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ড মহামারি আকারে ধারণ করছে বলে অভিযোগ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নাই। দেশে গণতন্ত্র না থাকার কারণে এসব হত্যাকাণ্ড বাড়ছে। দেশে আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত হওয়া জরুরি। দেশের মালিক জনগণ, আর জনগণের মালিকানা তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে।’
বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা গুম-খুনের সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত এবং এ জন্য সরকারের জবাবদিহি করা উচিত।’
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিচার বর্হিভূত হত্যার পরিসংখ্যান উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ‘বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ২০১১ সালে ছিলো ৬০ জন, ২০১২ সালে ৫০ জন, ২০১৩ সালে ৪০ জন। আর ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৩২১ জন হয়েছে। এটা মহামারী। এটা মহারোগ। এটি কিভাবে হয়েছে? কিভাবে সম্ভব? শাসন ব্যবস্থার রুগ্নাবস্থার কারণে এটি হয়েছে। দেশে গণতন্ত্রহীনতার কারণে এটি ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে মানুষ বিচারহীন ভাবে মরতে পারে না। এটি বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের সকল উচ্চস্তরের ব্যক্তিদের নিয়ে তদন্ত করতে হবে। এটি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। এর কারণগুলো বের করে প্রতিকার কিভাবে করা যায় তা করতে হবে। মানবাধিকার নিশ্চিত করা সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব কর্তব্য। ৪৭ বছর পরও অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এটা দেখে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারছি না।’
তিনি সরকারের কাছে আবেদন করে বলেন, ‘এর বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে মহামান্য সরকারের কাছে আবেদন করছি। আপনারা সব ক্ষমতা রাখেন। এটি কেন হলো তা বের করুন। আপনারা না পারলে আমাদের বলুন, আমরা সহযোগিতা করতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল হুদা মিলু চৌধুরীর সভাপাতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহিদুল ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোফাজ্জল করিম, মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদের মহাসচিব ফরিদ উদ্দিন ফরিদ, আফজাল হোসেন সেলিম, অ্যাডভোকেট ড. মো. শাহজাহান প্রমুখ।