বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে যুক্তরাজ্য সরকার আগ্রহ দেখিয়েছে বলেই বাংলাদেশ আলোচনা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফিরিয়ে আনার জন্য যে আলোচনা, যাদের সঙ্গে আলোচানার প্রয়োজন সেই আলোচনা চলছে। আলোচনায় পজিটিভ দিক দেখছি বলেই চালিয়ে যাচ্ছি।’
রবিবার রাজধানীকে একটি অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সিনিয়র সহকারী জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ১৪১ তম প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি।
এই আলোচনা অনেকদূর এগিয়ে গেছে জানালেও খালেদা জিয়ার ছেলেকে দেশে ফেরানোর পর আলোচনাকে সফল বলবেন মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যে আলোচনার কথা বলেছেন, সেটা কোন পর্যায়ে-চানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তবে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত এটা ফলপ্রসু হচ্ছে কিনা সেটা কিন্তু আমি বলব না।’যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে বন্দীবিনিময় চুক্তি না থাকা সত্ত্বেও তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো সমস্যা নয় বলেও জানান আইনমন্ত্রী। বলেন, অন্য একটি আইন অনুযায়ী যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা এগিয়েছে।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের শুরুর দিকে গ্রেপ্তার তারেক রহমান পরের বছরের ৩ সেপ্টেম্বর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। এরপর জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি আর ফেরেননি।
দুই বছর আগে বিদেশে অর্থপাচার মামলায় তারেককে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে হাইকোর্ট। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার ১০ বছরের কারাদণ্ড ও দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে বিএনপি।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেকের বিরুদ্ধে আরও বিভিন্ন মামলা চলছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বিচার একেবারে শেষ পর্যায়ে। এই মামলায় বিএনপি নেতার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।তারেক রহমানকে এই হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন হিসেবে দাবি করছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে থাকার সময় প্রভাবশালী হয়ে উঠা বনানীর হাওয়া ভবনে এই হামলা নিয়ে জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল মান্নান, ফাঁসিতে ঝুলা জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজহিদের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয় বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন মুফতি হান্নান। তার একটি ভিডিও জবানবন্দিও আছে সামাজিক মাধ্যম ইউটিউবে।
যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার অঙ্গীকার করেছেন। দেশে ফেরার আগের দিন শনিবার যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও প্রবাসী বাঙালিদের এক সংবর্ধনায় তিনি বলেন, ‘খুনিদের কাছ থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে, যেভাবেই তারককে দেশে ফেরত নেবই নেব। ব্রিটিশ সরকারের সাথে আমি কথা বলেছি।’দেশটিতে যাওয়ার পর গত ১৭ এপ্রিল এক মত বিনিময়েও প্রধানমন্ত্রী তারেককে ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘তার (তারেক রহমান) উচিত আদালতের মুখোমুখি হওয়া। আমরা বৃটিশ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছি। অবশ্যই একদিন আমরা তাকে ফেরত নেব।’
পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যই স্পষ্ট তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে আদালতের মুখোমুখি করতে চাইছে সরকার।কিন্তু কীভাবে বিএনপি নেতাকে ফিরিয়ে আনা হবে, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। এর আগেও একবার তাকে ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকার চিঠি দিয়েছিল যুক্তরাজ্যকে। কিন্তু সেই চিঠির জবাব এসেছে কি না, সে তথ্য মেলেনি। আবার বছর দুয়েক আগে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলে তারেকের বিষয়ে লাল নোটিশ জারি হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকলেও সেটি করতে তো বাধা নেই।’‘আরেকটি আইন আছে, সেটা হলো মিউচ্যুায়াল লিগ্যাল এসিসটেন্ট অ্যাক্ট । এ আইনে কিছু কিছু অপরাধীদের বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু ফিরিয়ে আনতে পারি। সেই মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এসিসটেন্ট অ্যাক্ট আমাদের এই দুই দেশের মধ্যেই (বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য) আছে।’
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাসের বাধ্যবাধকতা এবং গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শাস্তির বিধান রেখে সংশোধিক ‘সড়ক পরিবহন আইন’ আগামী বাজেট অধিবেশনেই পাসের জন্য তোলা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সংসদে এই যে, বাজেট সেশন আসছে, সেখানে অন্তত পক্ষে আইনটা উত্থাপন করার মতো প্রস্তুতি আমাদের আছে।’মন্ত্রী জানান, আইনটা ভেটিং (আইনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা) পর্যায়ে আছে। এ নিয়ে সব স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেই আলোচনা হয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, ‘দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য তিন চারটা জিনিস দেখতে হয়। চালকদের প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স প্রাপ্তি, গাড়ির ফিটনেস ও সড়কের অবস্থা। এসব বিষয় দেখে শুনে একটা পরিপূর্ণ আইন ও যুগোপযোগি করতে একটু সময় লাগছে।’মন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলব, সড়ক দূর্ঘটনার মামলা যখন আদালতে আসবে তখন অত্যন্ত পক্ষে এমন সাজা হয় যাতে চালক ও মালিকরা বুঝতে পারে এ রকম অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না।’