কাকরাইলে তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে এ মারামারি ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে দুই গ্রুপকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সকাল থেকেই সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান করছে।
গত বিশ্ব ইজতেমার আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে মতবিরোধ চলে আসছিল তাবলিগ-জামাতের দুই গ্রুপ সাদপন্থী ও তার বিরোধী গ্রুপের মধ্যে। সাদকে ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে সংকট আরও ঘনীভূত হয়। সা’দের বক্তব্য নিয়ে দুই পক্ষ অন্তত চারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। আবারও আজ শনিবার তারা হাতাহাতির পর মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।
কাকরাইলের মুসল্লিরা জানান, সাদ-বিরোধীরা কয়েক দিন ধরে মারকাজ ও এর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে ছাত্রদের জড়ো করতে শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তাঁরা মারকাজ সংলগ্ন কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার দুটি কক্ষে মোবাইল ফোন ‘জ্যামার’ বসান। এতে পুরো মারকাজের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে সকালে দৈনন্দিন পরামর্শ সভা থেকে সাদের সিদ্ধান্ত আর না মানার ঘোষণা দেয়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল থেকেই কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে মাওলানা সাদের বিতর্কিত বক্তব্যকে ঘিরে সাদপন্থী ও সাদবিরোধীরা বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সাদবিরোধীরা বলেন, মাওলানা সাদ যদি তার বিতর্কিত বক্তব্য থেকে সরে না আসে তাহলে তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি শুরু হয়।
জানা যায়, দেশের কওমি মাদরাসাগুলো ছুটির কারণে কয়েক হাজার মাদরাসা ছাত্র কাকরাইলে জড়ো হয় তাবলিগে সময় দেয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার থেকে তারা আসতে থাকে কাকরাইল মসজিদে।এদিকে দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজে অনুষ্ঠিত ১৬-১৯ এপ্রিল বাংলাদেশিদের জোড়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা গতকাল সবার উপস্থিতিতে শোনানোর কথা ছিল। এ কারণে মাওলানা সাদপন্থীরাও জড়ো হন কাকরাইল মারকাজে।
গতকাল মারকাজে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। দুপুরে মারকাজের ভেতরে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ না করায় পুলিশ দুটি জ্যামার যন্ত্র উদ্ধার করেন। লিল্লির নেজামুদ্দিন মারকাজের অনুসারীদের অভিযোগ, নেজামুদ্দিনের ফয়সালা যাতে কার্যকর করা না হয় এ কারণে ছাত্রদের আনা হয়েছে বিভিন্ন মাদরাসা থেকে। আর বাইরের কারো সঙ্গে যেন যোগাযোগ করা না যায় এ কারণে জ্যামার বসানো হয়েছিল।
তবে কাকরাইল মারকাজ শুরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমদের ছেলে মাওলানা হানজালা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দেশের মাদরাসাগুলো রমজানের আগে বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্র শিক্ষক এবং আলেম উলামা এ সময় তাবলিগে সময় দেয়ার জন্য আসেন। তাদের আনার অভিযোগ ভিত্তিহীন।জ্যামার বসানো বিষয়ে তিনি বলেন, নেজামুদ্দিনের অনুসারীরা পরামর্শে বসে কিছু না হতেই পুলিশ ডাকে। এ জন্য জ্যামার বসানো হয়েছিল।
জানা যায়, গতকাল কাকরাইলে জড়ো হওয়া আলেম উলামা ও শিক্ষার্থীরা কয়েকটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করেন।এগুলো হলো, ১. মাওলানা সাদের কোনো ফয়সালা বাংলাদেশে মানা হবে না। ২. নিজামুদ্দিনের জোড়ে যে ২ জনকে বাংলাদেশের ফয়সাল নিযুক্ত করা হয়েছে তা কার্যকর করা যাবে না। ৩. কাকরাইলের কোনো সিদ্ধান্ত দুই তৃতীয়াংশ ফয়সারের সিদ্ধান্তেই কার্যকর হবে। ৪. কাকরাইলের কোনো চিঠি উলামা ফয়সালদের দস্তখত ছাড়া গ্রহণ হবে না।
কাকরাইল মারকাজের চলতি সপ্তাহের ফয়সাল মাওলানা রবিউল হক। তবে গতকাল তিনি এ সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেন বলে জানা যায়।মাওলানা হানজালা বলেন, আলেমরা এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রস্তাব করেছেন তবে শুরা সদস্যরা আলেম উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া এসব চূড়ান্ত করবেন না বলেই মত দিয়েছেন।
এদিকে আজ শনিবার সকালে মশওয়ারা চলাকালীন নেজামুদ্দীনের অনুসারীরা বিভিন্ন হালকা থেকে মশওয়ারার কামড়ায় জড়ো হয়। এবং নেজামুদ্দীনের এতায়াতের বাইরের লোকদের উচ্চবাচ্চ করেন। এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।বিষয়টি সম্পর্কে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, গতকাল মাওলানা রবিউল হক সাহেবের ফয়সালাকৃত সিদ্ধান্ত ছিলো, নেজামুদ্দীন বা মাওলানা সাদের কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে চলবে না। বিষয়টি ঢাকার হালকার সাথীদের কাছে জানাজানি হলে তারা এর প্রতিক্রিয়া জানাতে মারকাজে আসেন এবং মশওয়ারায় অংশ নেন।
এদিকে মাওলানা সাদপন্থীরা বলে যায়, তারা যদি নেজামুদ্দীনের ফয়সালা না মানেন তবে কাকরাইলের ফয়সালাও নেজামুদ্দীনের অনুসারীরা মানবেন না।