খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক না থাকলেও এ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড কতটা শক্ত তার প্রমাণ হবে। এর মাধ্যমে তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের আন্তরিকতার বিষয়টি জনগণ বুঝতে পারবে।
বৃহস্পতিবার (৩ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এ দুই সিটির নির্বাচন উপলক্ষে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলা হয়।
সুজনের চেয়ারম্যান কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন করেন সুজনের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
আবুল মকসুদ বলেন, ‘এ দুই সিটিতেই প্রার্থীরা হলফনামায় তাদের নিজেদের তথ্য গোপন করেছেন। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এটি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের পরে হলেও নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে। তারা নির্বাচিত মেয়র কিংবা কাউন্সিলরদের শপথের আগেই সেটি বাতিল করে দিতে পারেন। এটি উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনেও হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ দুই সিটিতে যে নির্বাচন হচ্ছে তাতে এখন পর্যন্ত অনেক অভিযোগ এসেছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত সেগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কমিশনকে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে এ নির্বাচন তাদের জন্য একটি পরীক্ষা। এর মাধ্যমে জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষা দেবে।’
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। এখন তারা আশঙ্কা করছেন শেষ পর্যন্ত কোনো অরাজকতা ঘটে কি না। সেটি যাতে না হয় সে জন্য এ দুই সিটিতেই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে।”
‘নির্বাচন কমিশনে সে আইনি ক্ষমতা রয়েছে। এখন কেবল বাস্তবায়নে সরকারের সহযোগিতা এবং তাদের সদিচ্ছা দেখাতে হবে। পাশাপাশি জনগণের নিরাপদ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’
আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে সব প্রার্থীর হলফনামার তথ্য যাচাই করা কঠিন কাজ। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর নির্বাচিতদের তথ্য সাত দিনের মধ্যে যাচাই করা যেতে পারে। কারও তথ্য গোপনের বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা যেতে পারে। এতে করে একটি ভালো কাজের সূচনা হবে। যা দেশের গোটা নির্বাচন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইতোমধ্যে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের প্রত্যাহার চেয়েছে বিএনপি বিষয়টি নিয়ে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘দুয়েকটি অভিযোগ হলে তার পরিপ্রেক্ষিতে একজন পুলিশ সুপারের অপসারণ চাওয়া হয়তো যৌক্তিক না। কিন্তু অভিযোগ যদি ৫/১০ টি কিংবা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে বিষয়টি অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে আমলে নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গাজীপুরে প্রার্থীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিকের নিচে। তবে মেয়র প্রার্থীরা সবাই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। আর খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। গাজীপুরে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী মিলিয়ে ৩৪৫ জনের মধ্যে ২১৯ জনের পেশা ব্যবসা। খুলনায় ১৯২ জনের মধ্যে ১২৬ জনের পেশা ব্যবসা।