খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকী। সেখানে এখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সন্ত্রাসী তাণ্ডব চলছে। ফলে নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মধ্যে এক ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের দাপটে খুলনা মহানগর জুড়ে এখন শুধুই আতঙ্ক।
তিনি বলেন, ভোটাররা ভীতিমুক্ত পরিবেশে নির্বিঘ্নে ভোট দেয়া দূরে থাক এখন তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম হুমকির মধ্যে নিপতিত। ইসি নির্বিকার ও নীরব দর্শক। নির্বাচন কমিশন জেগে থেকে ঘুমিয়ে থাকার ভান করছে। এই কারনেই খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মাঝে কানাঘুষা চলছে নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন সরকারের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বাস্তবায়ন করছে।’
রবিবার (১৩ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
কারাবন্দি অসুস্থ খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্বজনদের দেখা করতে না দেয়াটা ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘আমরা আগেই জানতে পেরেছিলাম দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থার প্রতিদিন অবনতি হচ্ছে। তাঁর হাঁটা চলা করতে অসুবিধা হচ্ছে। এখন তাঁকে পরিত্যক্ত স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর ভবনে রাখায় নানা ধরনের রোগ ও সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন তিনি। এমনকি সরকারি মেডিকেল বোর্ড বেগম খালেদা জিয়াকে অর্থোপেডিক্স বেড দেয়ার এবং ফিজিও থেরাপির সুপারিশ করলেও এখন পর্যন্ত সেটির কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বার বার তাঁর অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। দেশনেত্রী ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আত্মীয়-স্বজনদেরকে দেশনেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না দেয়াটা সরকারের কালো কাপড় ঘেরা গভীর অন্ধকারের মধ্যে এক ভয়াল ষড়যন্ত্রের অংশ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অশুভ ও দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যেই কারাবন্দি করা হয়েছে বলে আমরা বারবার যে আশঙ্কার কথা বলে আসছি সেটি আরও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের প্রধান নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভিত্তিহীন মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাবন্দি রেখে এখন দেশনেত্রীর সঙ্গে তাঁর স্বজনদেরও দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। ১০দিন ধরে পরিবারের কোনো সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। পরিবারের স্বজনসহ আমরা দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থার কোনো খবর পাচ্ছি না। বিএনপির নেতাকর্মীসহ দেশবাসী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দেশী-বিদেশী চক্রান্তের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতেই তাঁকে সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করা হয়েছে। এখন তাঁকে চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে প্রতিহিংসার এক বিভৎস প্রতিশোধ নিতে চান কিনা তা নিয়ে দেশের মানুষ উৎকন্ঠিত। তাঁকে মুক্তি না দিলে অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে কঠিন খেসারত দিতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তির ওপর নির্ভর করবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। তাঁকে বন্দি রেখে আগামী একদলীয় ফ্যাসিবাদী নির্বাচন করার উদ্যোগ নিলে কঠিন প্রতিরোধে তা নস্যাৎ করে দেয়া হবে।’
রিজভী বলেন, ‘সকল জনমতকে উপেক্ষা করে আকষ্মিকভাবে বাংলাদেশ– ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। এমনকি তাদের বাছাইকৃত লোক দিয়ে গঠিত একদলীয় জাতীয় সংসদে আলোচনা করারও প্রয়োজন বোধ করেনি। প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় ঋণ বাস্তবায়ন এবং সার্বিক সহযোগিতার বিস্তার ঘটাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে কি না, সেই সংশয় এখন বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আসলেই নাচের পুতুলের ভূমিকাই পালন করছেন। এই চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন। ভারত আমাদের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন দিক দিয়েই সীমান্ত রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে সীমান্ত প্রতিযোগিতা। তাদের সঙ্গে সীমান্ত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ায় দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। দেশের মানুষকে না জানিয়ে এধরনের দেশবিরোধী চুক্তির খবরে গোটা জাতি হতভম্ব ও চিন্তিত হয়ে পড়েছে। দেশবাসী মনে করে আবারও ক্ষমতা দখল করতে দেশবিরোধী এই গোপন চুক্তি করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভিন দেশের এক্সটেনশন হতে দেয়া যাবে না। অবিলম্বে গোপন চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ।